
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান পাকিস্তান সফর থেকে ছিটকে গেছেন চোটের কারণে। আগামী ২৮ মে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনি খেলতে পারবেন না। এই বিষয়ে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আইপিএলের চলমান মরসুমে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে গতকাল জয়পুরে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে খেলার সময় মোস্তাফিজের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চিড় ধরা পড়েছে। চোটের গুরুতরতা বিবেচনায় তাকে পুরোপুরি সেরে উঠতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে। ২৯ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসারের ফিজিও দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ‘গতকাল আইপিএলে খেলার সময় তার বাম হাতের বুড়ো আঙুলে চিড় ধরা পড়েছে। এই চোটের জন্য যথাযথ বিশ্রাম ও পুনর্বাসন দরকার। আমাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ মোস্তাফিজকে মাঠে নামানো যাবে না।’
আইপিএল লিগ পর্ব থেকে বাদ পড়া দিল্লির শেষ ম্যাচে মোস্তাফিজ দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন করেছিলেন। ৪ ওভারের পুরো কোটা পূর্ণ করে তিনি নিয়েছিলেন ৩ উইকেট, যা দলকে জয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তবে, একটি ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় আরও দুই উইকেট পেতে পারতেন এই ‘কাটার মাস্টার’ বলে খ্যাত পেসার।
মোস্তাফিজের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তান সফরের জন্য নতুন করে স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন ৩২ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তিনি ১৬টি টেস্ট ও ২টি ওয়ানডে খেললেও এখনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়নি।
এর আগেও বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার পিঠের চোটের কারণে পাকিস্তান সফর থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। সৌম্যের জায়গায় টিমে সুযোগ পেয়েছেন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
আগামী ২৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া এই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানের লাহোরে। দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ মে এবং সিরিজের শেষ ম্যাচ ১ জুন। প্রতিটি ম্যাচ স্থানীয় সময় রাত ৮টায় শুরু হবে, যা বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা।
বাংলাদেশের এবারের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে রয়েছেন—
লিটন দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, জাকের আলী, মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, তানভীর ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম।
মোস্তাফিজের এই অনুপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য এক বড় ধাক্কা হলেও নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ পেয়ে নিজেদের মেধা প্রদর্শনের ভালো সুযোগ হয়ে দাঁড়াবে। তবে পেসারের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত এই সিরিজে যেখানে বাংলাদেশের সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
মোস্তাফিজ নিজেও বলেছেন, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দেশের হয়ে সেরাটা দিতে চাইবেন। এই চোট থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার জন্য বিশ্রাম নিতেই হবে বলে বোঝানো হয়েছে। তাই তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও মোস্তাফিজের স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে বলে জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী সিরিজ ও আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে মোস্তাফিজ পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে ফিরবেন।
এদিকে, পাকিস্তানের সাথে এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের এক বড় ধাপ। তাই দলের সকল সদস্যের ওপর চাপ থাকছে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার।
মোস্তাফিজের মতো অন্যতম সেরা পেসারের অনুপস্থিতি দলকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করলেও, তরুণদের মধ্য দিয়ে নতুন শক্তি ও উদ্যম তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই এই সুযোগে অন্যদের জন্য নিজেকে প্রমাণ করার মাঠ হয়ে উঠবে পাকিস্তান সফর।
বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তরা মোস্তাফিজের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন এবং তার আবারও জাতীয় দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের প্রত্যাশায় রয়েছেন। একই সঙ্গে দলের বাকিদের প্রতি আস্থা প্রকাশ করছেন তারা যেন ভালো খেলায় দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত এনে দিতে পারেন।
এই সিরিজের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা ও খেলাধুলার মান উন্নত করার সুযোগ পাবে। সবশেষে, মোস্তাফিজের মতো তারকা খেলোয়াড়দের দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসাটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় উপহার হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ