
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কর্মসূচি চালু করেছে। ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিনের অর্থাৎ ২ জুনের ট্রেনের টিকিট আজ শুক্রবার (২৩ মে) থেকে অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৭ জুনকে ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময়সূচি তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় ২৩ মে সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে এবং পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে আজ দুপুর ২টা থেকে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাজারো মানুষ কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। সেই ঘরমুখো মানুষের সুরক্ষিত, সুশৃঙ্খল ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষ এবারের ঈদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শতভাগ আসনের টিকিট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত। ফলে টিকিটপ্রত্যাশীদের স্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। এর পরিবর্তে যাত্রীরা ঘরে বসেই নির্ধারিত অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন।
ঈদের আগে মোট ৭ দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময়সূচি নিচে তুলে ধরা হলো:
৩১ মে’র ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ২১ মে
১ জুনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ২২ মে
২ জুনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে আজ ২৩ মে
৩ জুনের টিকিট বিক্রি হবে ২৪ মে
৪ জুনের টিকিট বিক্রি হবে ২৫ মে
৫ জুনের টিকিট বিক্রি হবে ২৬ মে
৬ জুনের টিকিট বিক্রি হবে ২৭ মে
এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি দিন সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের এবং দুপুর ২টায় পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
রেলওয়ের সূত্র অনুযায়ী, এবারের ঈদযাত্রায় শুধুমাত্র ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মোট আসন সংখ্যা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩১৫টি। তবে এই সংখ্যাটি শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ঈদ উপলক্ষে কিছু অতিরিক্ত বিশেষ ট্রেনও চালানো হতে পারে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, তবে এখনো তা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এসব টিকিট একবার কেটে নেওয়ার পর আর ফেরত দেওয়া যাবে না। এতে টিকিট কালোবাজারি বা একাধিকবার টিকিট কেটে রেখে পরে ফেরত দিয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টি করার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
টিকিট সংগ্রহের জন্য যাত্রীদের "রেলসেবা অ্যাপ", "eticket.railway.gov.bd" ওয়েবসাইট অথবা সোনালী ব্যাংক, নগদ, বিকাশ ও রকেট মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান রেলস্টেশনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তা ও মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী চাপের ফলে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য রেলওয়ে পুলিশ (আরএনবি), আনসার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ইউনিটগুলো সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) বলেন, “এই বছর আমরা টিকিট বিতরণকে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর করেছি। ফলে টিকিট সংগ্রহে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে এবং দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার ভোগান্তিও নেই। আমাদের লক্ষ্য, প্রতিটি যাত্রী যেন নিরাপদে এবং সময়মতো নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।”
রেলওয়ে কর্মকর্তারা আরও জানান, যারা এখনো টিকিট কাটেননি, তারা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী দিনগুলোতে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে সার্ভার চাপ এড়াতে ভোরে বা রাতে অপেক্ষাকৃত কম চাপে লগইন করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা।
ঈদযাত্রায় ট্রেন হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক বাহন। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও ট্রেনের টিকিট পেতে আগ্রহীর সংখ্যা বেশি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অগ্রিম টিকিট বিক্রির এই উদ্যোগ যাত্রীসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ