
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে ঢাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতির ২৪তম জাতীয় সম্মেলন এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যেই। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং কোনোভাবেই তা মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, “শুধু নির্বাচন করার জন্যই আমরা দায়িত্ব নিইনি। আমাদের আরও দুটি গুরুদায়িত্ব রয়েছে—একটি হচ্ছে জরুরি সংস্কার, অন্যটি হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এই দুইটি ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, তা করতে পারছি না।” তিনি বলেন, “আমরা গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দীর্ঘসময় ধরে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করেছি। দায়িত্ব অনেক, কিন্তু বাস্তবতা বলছে—আমরা আটকে আছি বিভিন্ন বাধায়। প্রতিটি পক্ষই দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে, রাস্তা আটকে দিচ্ছে, জনজীবন বিপর্যস্ত করছে। এতে করে সরকার কার্যত অচল হয়ে পড়ে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, “আমরা দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। কিন্তু দায়িত্ব পালনে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। কারা এই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, সেটাও পরিষ্কার। আমরা এখন ভাবছি, এই বাধাগুলো কীভাবে অতিক্রম করব। যদি পারি, তাহলে কৌশল কী হবে; আর যদি না পারি, তাহলে আমাদের করণীয় কী হবে, সে দিকেও আমরা নজর দিচ্ছি।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে বলেছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এই সময়সীমার একদিন এদিক-সেদিক যাওয়ারও সুযোগ নেই। সুতরাং এ নিয়ে বারবার নতুন করে প্রশ্ন তোলা বা অনিশ্চয়তা ছড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”
তিনি আরও বলেন, “সময়ের একটি রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। আমরা যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারি, তবে আমাদের এই অবস্থানে থাকা অর্থবহ হবে। অন্যথায়, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সবারই নানা কাজ রয়েছে। তখন এই দায়িত্বে থাকা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরকারের কার্যক্রমে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমর্থনের অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমরা কেউই একা চলতে পারি না। তাই সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শুধু নির্বাচন নয়, বরং একটি শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর সেটি তখনই সম্ভব, যখন আমরা সংঘাত নয়, সহযোগিতার পথে হাঁটব।”
উল্লেখ্য, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একজন সুপরিচিত পরিবেশবিদ এবং মানবাধিকারকর্মী। তিনি গণআন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, সরকার নির্বাচন নিয়ে এক ইঞ্চিও ছাড় দেবে না এবং অজুহাতে সময়চ্যুতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের গুজব ও আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, নির্বাচনের সময়সীমা আরও পেছাতে পারে কিংবা সরকার সময়মতো নির্বাচন না-ও দিতে পারে। এসব ধারণা নাকচ করে উপদেষ্টা রিজওয়ানা এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মূলত সরকারের সময়সীমা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা স্পষ্ট করেছেন।
রিজওয়ানার বক্তব্য পরিষ্কার করে দিয়েছে—বর্তমান সরকার নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে একদম অনড়। রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক অজুহাতে সময় লঘু করা হবে না। এখন প্রশ্ন—আসন্ন এই নির্বাচন কিভাবে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য হবে, এবং সরকার সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না।
এ সময়টা হবে সরকারের জন্য যেমন বড় পরীক্ষা, তেমনি দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ