
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না—এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনের কড়া জবাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের আইসিটি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি বিস্তারিত পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, অধ্যাপক ইউনূস ক্ষমতার মোহে থাকা ব্যক্তি নন, বরং দেশের জন্য, বিশেষত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বার্থে তার উপস্থিতি অপরিহার্য।
ফয়েজ আহমদের বক্তব্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে যে গুঞ্জন উঠেছে—ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন, কিংবা তাকে সরে যেতে হতে পারে—তা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি লেখেন, “অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতার প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বার্থে তার নেতৃত্ব এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দেশ যে রক্তপাতহীন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রক্রিয়ায় ড. ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা একটি বড় সম্পদ।”
তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা বা তাঁর দপ্তর থেকে পদত্যাগ করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। বরং সরকারের প্রতিটি স্তরে আরও বেশি কার্যকর হতে হবে, ক্যাবিনেটকে হতে হবে আরও গতিশীল, উপদেষ্টাদের ভূমিকা হতে হবে দৃশ্যমান ও গণমুখী। আমাদের জনগণকে দেখাতে হবে যে, এই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে যে সরকার এসেছে, সেটি প্রকৃত অর্থেই জনগণের স্বার্থে কাজ করছে এবং সাফল্য অর্জন করছে।”
ফয়েজ আহমদ তার পোস্টে সরকারের প্রতি একটি বিশেষ আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, “সরকারকে এখন থেকেই দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে, নিয়মিতভাবে আলোচনা করতে হবে। প্রত্যেক দলের মতামত শুনতে হবে এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বা একপাক্ষিকতা এড়িয়ে চলতে হবে। এই অন্তর্বর্তী সরকার যেন পুরো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে আস্থায় নিতে পারে, সেটাই এখন সময়ের দাবি।”
ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার এই ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি উল্লেখ করেন, “আজকের আধুনিক বিশ্বে কোনো সভ্য দেশের সেনাবাহিনী সরাসরি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না। তাই সেনাপ্রধানের নির্বাচন বিষয়ে ‘ডিসেম্বরে ভোট চাই’ বক্তব্যটি আইনি ও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যথাযথ নয়। সেনাবাহিনীকে তাদের নির্ধারিত সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
তবে একইসঙ্গে তিনি সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব, আস্থার প্রতীক। তাই তাদের সঙ্গে কোনো হঠকারী বা আবেগনির্ভর আচরণ কাম্য নয়। যেকোনো সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।”
ফয়েজ আহমদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সকল প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। তার ভাষায়, “আমরা চাই, এই সরকার জনসম্মত সংস্কার সম্পন্ন করে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করুক। সেই লক্ষ্যেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে। জুলাই মাসের মধ্যেই সেই কাঙ্ক্ষিত 'জুলাই সনদ' বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তিনি আরও লেখেন, “আগামী জুলাই-আগস্ট মাসে আমরা জাতীয়ভাবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর এক বছর পূর্তি উদযাপন করব। সেই সঙ্গে আগস্টের মধ্যেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রথম রায় আলোর মুখ দেখবে বলে আমরা আশাবাদী।”
পোস্টের একেবারে শেষাংশে এসে ফয়েজ আহমদ লেখেন, “ইনশাআল্লাহ, আমরা হারব না, আমাদের হারানো যাবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। প্রফেসর ইউনূস জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই পোস্টের মাধ্যমে গুঞ্জনের যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, সেটি কার্যত বাতিল করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, অধ্যাপক ড. ইউনূস এখনও দেশের নেতৃত্বে আছেন, থাকবেন এবং বর্তমান রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সফল করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবেন।
গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়া পদত্যাগের সম্ভাবনার বিষয়টি এমন সময় সামনে আসে, যখন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে, সেনাবাহিনীর বক্তব্য, দলীয় রাজনৈতিক নেতাদের নানা মতভেদ এবং নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি নিয়ে বিতর্ক জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সহযোগীর এই ঘোষণা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, সরকার এখনও তার পরিকল্পনা ও অঙ্গীকারে অটল রয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, এই বিবৃতির পর রাজনৈতিক অঙ্গনে কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনায় বসে। তবে জনমনে একটাই প্রশ্ন—এই রূপান্তর শেষপর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ধারায় পৌঁছাবে তো?
ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ'র সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে ক্লিক করুন
বাংলাবার্তা/এমএইচ