
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সংযোগ পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহল পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট এবং নিয়মিত শিপিং সেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রস্তাবের সঙ্গে তৈরি পোশাক, কৃষি খাত এবং বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশন বিষয়ক সহযোগিতার প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই সফরের মধ্যেই রোববার (২৪ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিষয়টি সামনে এনেছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-করাচি বাণিজ্যিক সংযোগের নতুন উদ্যোগটি মূলত হয় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দ্দিনের মধ্যে, সম্প্রতি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সময়। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেলা প্রশাসন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অতিথিদের স্বাগত জানান।
উল্লেখযোগ্য যে, এই বৈঠকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ী মহল পাকিস্তান-বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। এতে সরাসরি ফ্লাইট ও শিপিং সেবা পুনরায় চালুর পাশাপাশি বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশন বিষয়ক প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আলোচনায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দ্দিন ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন যে, শিগগিরই একটি যৌথ বাণিজ্য ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হবে। যৌথ সভার লক্ষ্য হলো সম্ভাব্য সহযোগিতা নির্ধারণ করা এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিস্পর্ধী ও কার্যকর বাণিজ্য চ্যানেল গড়ে তোলা।
চলতি আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, খাদ্য ও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা বিদ্যমান। করাচিতে আগামী ২৫–২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি মেলায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, চামড়া এবং অপরিহার্য পণ্যের খাতে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের সুযোগ ব্যাপক।
তাছাড়া, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ায় পণ্য রপ্তানির জন্য ত্রিপাক্ষীয় সহযোগিতা গড়ে তোলার সম্ভাবনাও আলোচনায় এসেছে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রামে পাকিস্তানি বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দিন কবির শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি পরিদর্শন করেন। সেখানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথভাবে জাহাজ নির্মাণ, ভাঙা ও পুনর্ব্যবহার শিল্পে কাজ করার সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিফিং হয়। বিষয়টি দুই দেশের শিল্প সম্প্রদায়ের জন্য নতুন বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও অতিথিদেরকে বন্দরের ইতিহাস, কার্যক্রম এবং চলমান প্রকল্পের বিস্তারিত উপস্থাপনা দেন। এতে বোঝা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বাণিজ্য বৃদ্ধির একটি কেন্দ্রীয় সংযোগবিন্দু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট ও শিপিং সেবা চালুর উদ্যোগ শুধু বাণিজ্যিক সংযোগ পুনঃস্থাপন নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের সূচনা হিসেবে ধরা হচ্ছে। সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে পণ্য, কাঁচামাল ও মানব সম্পদের দ্রুত স্থানান্তর সম্ভব হবে, যা বাণিজ্যিক খরচ কমাবে এবং সময় সাশ্রয় করবে।
তথ্য অনুসারে, বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে, দুই দেশের ব্যবসায়ী মহল রপ্তানি ও আমদানি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও কার্যকরী করতে পারবে। পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ ও রিসাইক্লিং শিল্পে যৌথ উদ্যোগ নতুন বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আলোচনার মাধ্যমে দু’পক্ষই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, যৌথ বাণিজ্য ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে সরাসরি ফ্লাইট ও শিপিং সেবা চালু, বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশন, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, নতুন বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও