
ছবি: সংগৃহীত
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানিয়েছে, নতুন সংস্কার ও সম্প্রসারণের ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস থেকে বেড়ে ৫৯ হাজার টিইইউএসে পৌঁছেছে। এই পদক্ষেপ মূলত বন্দরে কনটেইনার জট কমানো, বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও দ্রুত ও মসৃণ করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
সিডিএর সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, ‘বন্দরকে আরও ব্যবসায়বান্ধব করে তোলা এবং ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বন্দরে কনটেইনার জট আর কোনো সমস্যা হবে না। গত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন দক্ষতা ও সেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে।’
ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে এবং পুরোনো স্থাপনাগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: পুরোনো নিলাম ইয়ার্ড, গাড়ি রাখার স্থান, ব্যাগেজ শেড ও এক্স-ওয়াই শেড।
এসব সংযোজনের ফলে বন্দরে কনটেইনার পরিচালনার সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিডিএ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বর্তমানে বন্দরে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ৪৭-৪৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। দৈনিক কনটেইনার জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা ১০টি থেকে বেড়ে ১২-১৩টিতে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে আমদানি ও রপ্তানিতে পণ্য ডেলিভারির সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা রপ্তানির লিড টাইম কমানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর ফলে প্রায় ৬ হাজার টিইইউএস রপ্তানিমুখী কনটেইনারের জন্য প্রি-স্ট্যাকিংয়ের ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া বন্দরের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করতে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড সময় কমানো, এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে সহায়তা বাড়ানোর দিকে কাজ চলছে।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ ধারণক্ষমতা আরও বাড়িয়ে প্রায় ৬২ হাজার টিইইউএসে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
যদিও বন্দরের ধারণক্ষমতা বেড়েছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান। লোকোমোটিভের স্বল্পতা রেল পরিবহনে বিলম্ব সৃষ্টি করছে, যা ঢাকা আইসিডিতে পণ্য পরিবহনে চাপ তৈরি করেছে। এছাড়া নিলামযোগ্য প্রায় ১০ হাজার কনটেইনার এবং ঢাকা আইসিডিগামী আরও ২ হাজার কনটেইনার ক্লিয়ারেন্সের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবুও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা মনে করান যে, সকল কার্যক্রম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে জাহাজগুলোর টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম ২.৫৮ দিনে কমেছে, আর বহির্নোঙরে অপেক্ষার সময় মাত্র দুই দিনে নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্দরে মাত্র চারটি কনটেইনার জাহাজ এবং একটি সাধারণ কার্গো জাহাজ বার্থের জন্য অপেক্ষা করছিল। সিডিএর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বন্দরের ইয়ার্ডে মোট ৪৪,১৩৩ টিইইউএস কনটেইনার উপস্থিত ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের এই ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করতে সাহায্য করবে। বন্দরে নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ, পুরোনো স্থাপনাগুলোর সংস্কার এবং পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কনটেইনার জট কমানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়া রপ্তানি ও আমদানি পণ্যের ডেলিভারি সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে লোকোমোটিভের স্বল্পতা এবং ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষমান কনটেইনারের চাপ এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও