
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়ায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে সেনাবাহিনী বলেছে, দেশের জনগণ যেন কোনো ধরনের গুজবে কান না দেন এবং বিভ্রান্ত না হন। শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী জানায়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসিয়াল লোগো ও মনোগ্রাম ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে—জনগণের মধ্যে ভীতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া, ভিত্তিহীন এবং মনগড়া তথ্যনির্ভর প্রচারণা।
ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনী আরও বলেছে, “জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি কিছু ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সশস্ত্র বাহিনী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অবিশ্বাস তৈরির অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত, যার পেছনে নাশকতামূলক উদ্দেশ্য রয়েছে।”
পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির একটি ছবিও যুক্ত করে দেখানো হয়েছে, যাতে জনগণ ভুয়া সংবাদ সনাক্ত করে বিভ্রান্তি এড়াতে পারেন। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
সেনাবাহিনী জোর দিয়ে জানায়, “গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন। সচেতন থাকুন।” তারা জনগণকে আহ্বান জানায়, যে কোনো সন্দেহজনক তথ্য বা বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলে তা যাচাই না করে ছড়াবেন না, বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। এসব গুজবের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সামাজিক অস্থিরতা উসকে দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করাই মূল লক্ষ্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় গুজব শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত বছরও একটি রাজনৈতিক সংবেদনশীল পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনীর নামে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। সে সময়েও সেনাবাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তা প্রত্যাহার করে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “এ ধরনের গুজব কেবল রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং জনগণের মানসিক স্থিতিশীলতাকেও নষ্ট করে। তাই সেনাবাহিনীর এই বার্তাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও জরুরি।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় তারা সদা প্রস্তুত এবং কোনো ষড়যন্ত্রকেই সফল হতে দেবে না। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সত্যনিষ্ঠ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সেনাবাহিনীর এই সরাসরি বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। হাজার হাজার মানুষ পোস্টটি শেয়ার করছেন এবং ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন।
সর্বশেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আবারও জনগণকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং গুজব, অপপ্রচার ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ