
ছবি: সংগৃহীত
দেশের অন্যতম ব্যস্ত বেনাপোল স্থলবন্দর এখন আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ ও তথ্যের ভিত্তিতে, কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ সামনে এসেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শনিবার (২৩ আগস্ট) থেকে এই ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল ইসলাম, যিনি এ কমিটির প্রধানও। অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম সচিব মো. ফিরোজ আহমেদ, যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা, এবং সিনিয়র সহকারী সচিব সুলতানা সালেহা সুমি, যিনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্তে প্রথম পর্যায়ে মেনিফেস্ট যাচাই, পণ্য চালান বিশ্লেষণ এবং কাস্টমস কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এনবিআরের নিজস্ব দলও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত। প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বহুদিন ধরে জাল ও পুনঃব্যবহৃত মেনিফেস্ট ব্যবহার করে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য খালাস করা হয়েছে। এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, আর বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
তদন্তের একাধিক সূত্র জানায়, বিশেষ করে উচ্চ শুল্কের পণ্য খালাসে এই অনিয়ম বেশি ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাস্টমস ও বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে শুল্ক পরিশোধ করি, কিন্তু সময়মতো পণ্য ছাড় পাই না। ফলে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি।”
অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু অভিযোগ করেন, “চোরাই পথে আসা পণ্য কম দামে বিক্রি হওয়ায় বৈধ ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে বৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।”
তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আবুল ইসলাম এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে কমিটির এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্য জানিয়েছেন, রাজস্ব ফাঁকিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, রাজস্ব সুরক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তদন্ত চলাকালীন সময়ে বন্দরের মেনিফেস্ট, চালান ও কাস্টমস কার্যক্রম নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। এটি শুধু বন্দর প্রশাসনকে সঠিক কার্যক্রমে আনা নয়, বরং দেশের বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, বিষয়টি সামনে আসতেই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে আনা-নেওয়া পণ্যের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এখন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।
এই অভিযানটি শুধু একটি মৌলিক তদন্ত নয়, বরং বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্বচ্ছ ও নিয়মবদ্ধ করার দিকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারের চোখ থাকবে প্রতিটি চালান, মেনিফেস্ট ও কাস্টমস কার্যক্রমের উপর।
বাংলাবার্তা/এসজে