
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে এক আলাদা স্থান অধিকার করে আছেন বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকা সত্ত্বেও তার প্রতি সমর্থকদের ভালোবাসা আর আস্থার কমতি নেই। গেল অক্টোবর মাসে শেষবার বাংলাদেশের জার্সি গায়ে উঠিয়েছিলেন সাকিব। এরপর থেকে নানা কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি, যা নিয়ে নিয়মিতই আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। তবে সেই দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নতুন করে তার দলে ফেরার দরজা খুলে দিয়েছে। বিসিবির পরিচালক ইফতেখার রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন, “সাকিবের জন্য বাংলাদেশের দরজা সবসময় খোলা আছে।”
সাকিবের দীর্ঘদিন মাঠ থেকে দূরে থাকার মূল কারণ ছিল তার বোলিং অ্যাকশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তার বোলিং অ্যাকশনকে বৈধ ঘোষণা করে। এর আগে গত বছর বেশ কিছু মাস তিনি নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি। এ কারণে বাংলাদেশ জাতীয় দলে তার জায়গা ছিল অনিশ্চিত।
তবে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এর মাধ্যমে আবারো প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব। গত সপ্তাহে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে ৬ মাস পর পিএসএলে মাঠে নামেন। যদিও ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে শূন্য রান করেছেন, বল হাতে একটি উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন। এই পারফরম্যান্স থেকে বোঝা যায়, তিনি এখনও খেলায় ফিরতে শুরু করেছেন, কিন্তু পূর্ণ রূপে ফেরা এখনো সময়ের অপেক্ষা।
সাকিবের জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্কের আরেকটি জটিলতা ছিল তার রাজনৈতিক অবস্থান। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকায় দলের ক্ষমতা হারানোর পর ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে দেশে ফেরেননি। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেকেই তাকে অবাঞ্ছিত মনে করতেন, যা তার দলের বাইরে থাকার অন্যতম কারণ ছিল।
দেশের মাটিতে তার বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ খেলার ইচ্ছা থাকলেও রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সে সিরিজও মাঠে মাঠে মাঠে পরিণত হয়নি। এরপর থেকে জাতীয় দল থেকে তাকে পরোক্ষভাবে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি ২০২۴ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এসব প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বিসিবি তাকে পুরোপুরি বাদ দেয়নি। বিসিবির পরিচালক ইফতেখার রহমান বলেন, “সাকিব সবসময় নির্বাচকদের ও টিম ম্যানেজমেন্টের বিবেচনায় থাকবে। ও যেকোনো দলের জন্য সম্পদ। ও একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার। এখনই ও ফিরেছে, বোলিং অ্যাকশন ঠিক করে। আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে নজরে রাখবে। ওর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একেবারেই শেষ নয়। নিষেধাজ্ঞার পর খুব অল্প ম্যাচ খেলেছে। আরও কিছু ম্যাচ খেলুক, তারপর আমরা বলতে পারব ওর ফেরা নিয়ে।”
অর্থাৎ, বিসিবি এখনো তাকে জাতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচনা করছে, যিনি প্রয়োজনমতো আবার দলে ফিরতে পারেন। তবে তার দলের পূর্ণাঙ্গ ফেরা এখনো নিশ্চিত নয়, বরং পরীক্ষামূলক পর্যায়ে তাকে আরও ম্যাচ খেলার পর মূল্যায়ন করা হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে বড় ধরণের অবনতি দেখা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট সিরিজে হেরেছে বাংলাদেশ। পরবর্তী সিরিজ পাকিস্তান সফরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে তারা। এই পরিস্থিতিতে সাকিবকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইফতেখার রহমান বলেন, “সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ—এই চার সিনিয়র খেলোয়াড় ছাড়া দল এখন একেবারেই নতুন। একটি ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। নতুন খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিভা আছে, কিন্তু প্রয়োগ করতে পারছে না। যত বেশি খেলবে, তত ভালো করবে। এখন যে অবস্থায় আছি, এখান থেকে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।”
এর আগে তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহরা সব ফরম্যাট থেকে অবসর নেন। মুশফিকুর রহিম বর্তমানে শুধু টেস্ট ক্রিকেট খেলেন। সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন, ওয়ানডে ও টেস্ট থেকে এখনও অবসর নেননি।
সাকিব আল হাসানের জন্য দেশের দরজা খোলা রাখার ঘোষণা বিশেষ অর্থ বহন করে। কারণ এটি স্পষ্ট করে দেয় যে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে এখনও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে। এর ফলে সাকিবও আবার দলে ফিরে নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারেন।
বিশ্বমানের অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিবের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দেশের ক্রিকেটের জন্য অপরিসীম মূল্য বহন করে। ফিটনেস, পারফরম্যান্স ও মানসিক প্রস্তুতি ঠিক থাকলে, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন। তবে সেটা কত দ্রুত সম্ভব হবে, তা সময়ই বলবে।
এখন সাকিবের মূল চ্যালেঞ্জ থাকবে নিজের সামর্থ্য ধরে রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্স দেখানো। ক্রিকেটপ্রেমীরা আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করছেন, যে দিন আবার সাকিবের ঝলক ধরে বাংলাদেশ দলের জার্সিতে মাঠ মাতাবেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে—এবার সেই ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে কবে, তা দেখার জন্য এখন সবার নজর বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায় টঙ্গাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ