
ছবি: সংগৃহীত
সরকার দেশের নয়টি জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে দেওয়া দান বা অনুদানকে আয়কর রেয়াতের আওতায় নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ, যে কোনো ব্যক্তি এখন থেকে এই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ বা সম্পদ অনুদান দিলে তা তার বার্ষিক করযোগ্য আয়ের পরিমাণ থেকে বাদ পড়বে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনুদানদাতারা আয়কর রেয়াত পাবেন এবং দানের পরিমাণ অনুযায়ী কর কমে যাবে বা কর দিতে হবে না।
এ উদ্দেশ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সম্প্রতি একটি গেজেট জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সালের ১২ নম্বর আইন) এর ধারা ৭৬(১) এর ক্ষমতাবলে এবং ষষ্ঠ তফসিলের অংশ ৩-এর অনুচ্ছেদ ২-এর দফা (১৩) অনুসারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষিত করা হয়েছে। যার ফলে, এই প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অর্থকরী বা প্রাকৃতিক অনুদান আয়কর রেয়াতের আওতায় গণ্য হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান কর রেয়াত সুবিধার আওতায় এসেছে:
১. বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন – থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
২. মাস্তুল ফাউন্ডেশন – সুবিধাবঞ্চিত শিশু, নারী ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নানা সামাজিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে।
৩. এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইন বাংলাদেশ – এতিম ও পরিবারহীন শিশুদের বিকল্প পারিবারিক যত্ন এবং শিক্ষা নিশ্চিত করে।
৪. রোগী কল্যাণ সমিতি – রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা ও অর্থ সহায়তা দেয়, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে।
৫. বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা – শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের অধিকার, শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে কাজ করে।
৬. গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র – স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিখ্যাত, এটি স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে গ্রামীণ জনস্বাস্থ্যে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
৭. ঢাকা আহছানিয়া মিশন – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাদক নিয়ন্ত্রণ, নারী উন্নয়ন ও দক্ষতা উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি চালায়।
৮. প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসিএসবি) – জীবনসায়াহ্নে থাকা রোগীদের জন্য ব্যথামুক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ যত্ন নিশ্চিত করে।
৯. আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন – দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরা যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাবৃত্তি ও সহায়তা প্রদান করে।
কীভাবে কর রেয়াত মিলবে?
এই গেজেট অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি করযোগ্য আয়ের আওতায় পড়েন এবং আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, তারা এই নয়টি প্রতিষ্ঠানে বৈধ ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে দান বা অনুদান দিলে তার রশিদসহ করদাতার হিসাবে তা দেখিয়ে কর রেয়াতের দাবি করতে পারবেন। তবে রেয়াতের পরিমাণ ও প্রক্রিয়া আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সীমার মধ্যেই থাকবে।
উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য প্রভাব
সরকারের এই সিদ্ধান্ত মূলত জনসেবামূলক বেসরকারি উদ্যোগগুলোর অর্থসংস্থান সহজ করতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে, ব্যক্তি পর্যায়ের দাতাদের মধ্যে কর রেয়াত পাওয়ার প্রলোভনে সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়াতে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে যারা অব্যাহতভাবে কাজ করে আসছে, তাদের জন্য এই রেয়াত প্রকল্প এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত সমাজকল্যাণমূলক কাজকে কর ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও এনজিওকর্মীরা। তাঁদের মতে, দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণে রাষ্ট্র এবং জনগণের যৌথ অংশগ্রহণে এ ধরনের কর নীতিগত সুবিধা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেও অনুদানদাতাদের স্বচ্ছ হিসাব রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন কর রেয়াত ব্যবস্থার অপব্যবহার না হয় এবং প্রকৃত জনকল্যাণমূলক কাজগুলোই উৎসাহিত হয়।
দেশের সামাজিক উন্নয়নকে কর ব্যবস্থার আওতায় এনে প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করা একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এই নয়টি প্রতিষ্ঠান কর রেয়াতের আওতায় আসায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ