
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আগামী ২ জুন উপস্থাপন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ওইদিন বিকাল ৪টায় বাজেট বক্তৃতা প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার থেকে। বাজেট উপস্থাপন হবে রেকর্ডকৃত ফরম্যাটে, যা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভি থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এরপর একযোগে দেশের সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বেতারকেও একই ফিড প্রচার করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এই তথ্য জানানো হয়।
নতুন অর্থবছরের বাজেট আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত প্রস্তাবিত সর্ববৃহৎ বাজেটগুলোর একটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের মূল দিকনির্দেশনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষার পরিসর সম্প্রসারণে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ—অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি—বহিঃসূত্র থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অবশিষ্ট ঘাটতি পূরণ করা হবে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, বিশেষ করে ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিচালন খাতে বরাদ্দ হতে পারে প্রায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে এ বছর বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো, যা সরাসরি মেগা প্রকল্প, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহন, জলবায়ু অভিযোজন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫.৫ শতাংশ। যদিও এটি আগের বছরগুলোর চেয়ে কিছুটা কম, তবে বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে এটাই বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা আসতে পারে বাজেট বক্তৃতায়। সরকার মনে করছে, মুদ্রানীতির কৌশলগত পরিবর্তন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক ও ভর্তুকি কাঠামোর সমন্বয় এর পেছনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
নতুন অর্থবছরের একটি বিশেষ দিক হলো—এই অর্থবছরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষে বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের খসড়া অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মিলে ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকার বাজেট দাবি করেছিল। ফলে চূড়ান্ত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা ও সমন্বয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এত বড় বাজেট প্রণয়ন একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও ভবিষ্যৎ সরকারকে একটি সুপরিকল্পিত কাঠামো দিয়ে যাত্রা শুরু করার সুযোগ দিতেই এ বাজেটের পরিসর ও লক্ষ্য উভয়ই বিস্তৃত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পরপরই সংসদে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। আগ্রহ রয়েছে বাজেটে কোন খাতে কর বাড়ছে বা কমছে, নতুন কোনো কর বসানো হচ্ছে কি না, কিংবা ভর্তুকি বা সামাজিক সুরক্ষা বর্ধিত হচ্ছে কি না—এসব প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী মহল ও বিশ্লেষকদের।
সরকার বলছে, এই বাজেট জনকল্যাণে প্রতিশ্রুতিশীল হবে এবং বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মূল্যস্ফীতির বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ