
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি অভিযোগ করেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দেশের সব রাজনৈতিক শক্তি ঐকমত্যে পৌঁছালেও একজন ব্যক্তি এই নির্বাচন চান না, এবং সেই ব্যক্তি হচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৩১ মে) সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা আব্বাস। এই সময় তিনি ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তার এই অভিযোগ তোলেন।
ড. ইউনূস বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রসঙ্গে কিছু মন্তব্য করেছেন বলে জানা যায়। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই মির্জা আব্বাস বলেন, “খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ড. ইউনূস জাপানে বসে আমাদের—অর্থাৎ বিএনপির—বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে তার কাছ থেকে আমরা এমন আচরণ আশা করিনি। বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা লজ্জার বিষয়। আমি খুব বিস্মিত হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “তিনি (ড. ইউনূস) বলেছেন, কেবল একটি দলই নাকি নির্বাচন চায়। আর আমরা বলছি, পুরো জাতি নির্বাচন চায়, কেবল একজনই চান না, তিনি ড. ইউনূস। তিনি নিজেই তো আগে বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এখন আবার বলছেন, নির্বাচন জুনে হোক। এটা কীভাবে হয়?”
মির্জা আব্বাস সাফ জানিয়ে দেন, নির্বাচন যদি বাস্তবায়ন করতেই হয়, তবে তা ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই করতে হবে। “এই দেশ ও জনগণের জন্য নির্বাচন অত্যাবশ্যকীয়। আমরা বহুবার বলেছি, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এর বাইরে কোনো তারিখে নির্বাচন হলে জনগণ মানবে না। আমরা নির্বাচনের পক্ষেই ছিলাম, আছি এবং থাকব।”
তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বরের প্রস্তাব তো বিএনপি দেয়নি, দিয়েছেন ইউনূস নিজেই। এখন তিনিই সেই অবস্থান থেকে সরে গিয়ে জুনের কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কার হয়ে কথা বলছেন?”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি জনগণের প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হয়, তবে দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
“যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। তখন জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায় করবে। এই আন্দোলন যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত হুমকিতে পড়তে পারে। এর দায় আমাদের নয়, এর দায় থাকবে তাদের—যারা নির্বাচন ঠেকাতে চাইছে।”
সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রচেষ্টার সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “জিয়াউর রহমান দেশের উন্নয়নের জন্য বহুমুখী সংস্কার করেছেন, কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আমদানি করেননি। আজকের সরকার বিভিন্ন বিদেশি পরামর্শক ও ব্যক্তিকে এনে দেশের ভেতর সংস্কারের নামে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এদের মধ্যে অনেকে নির্বাচনের প্রশ্নেও হস্তক্ষেপ করছেন।”
আলোচনার শেষ দিকে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার প্রশংসা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা কিংবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তিনি আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি। তার হাতে দেশ গঠনের মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে। আজ যারা দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের উচিত তার অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া।”
মির্জা আব্বাসের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় এবং এক্ষেত্রে যে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ বা প্রভাবকে তারা অগ্রহণযোগ্য মনে করে। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তার এই কটাক্ষ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতেও পারে।
অন্যদিকে, ড. ইউনূস এই বিষয়ে কী বলেন, সেটি এখনো জানা যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও অবস্থান দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়াবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ