
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কয়েকদিন ধরে অব্যাহত ভারি বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই অন্তত ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে ফেনী, বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও হালদা নদীর পানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে সিলেট বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানিও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এসব নদ-নদীর পানি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে এবং স্থানীয়ভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারতের উপকূলে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গেলেও এর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বড় প্রভাব ফেলছে। গত দুই দিন ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার শুধু ঢাকা বিভাগেই গড়ে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির মাত্রা এর চেয়েও বেশি।
বলা হয়েছে, আগামী ১ জুন (রোববার) থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। তবে বৃষ্টি কমার পর পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন করে দেখা দিতে পারে পাহাড়ধসের আশঙ্কা। কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ইতোমধ্যে পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকা দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত পাহাড় কাটা ও বসতি গড়ে ওঠার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেখানে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি নোয়াখালী, কুমিল্লা, বান্দরবান ও চাঁদপুরেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়কপথে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, যার ফলে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এর আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীও দ্রুত ফুলেফেঁপে উঠেছে এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এসব নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট বিভাগের অবস্থা তুলনামূলকভাবে আরও নাজুক। সেখানে ইতোমধ্যে যাদুকাটা, সারিগোয়াইন, মনু, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এই পানি প্লাবিত করতে পারে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসব এলাকায় স্বল্পমেয়াদী বন্যা হলেও তা হঠাৎ করে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে যদি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী উদয় রায়হান জানান, ‘‘চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের নদীগুলোর পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে স্থানীয়ভাবে তা স্বল্পমেয়াদি বন্যা তৈরি করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা নেই।’’
হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহ সফল হলেও বিপর্যস্ত পরিবেশ
অন্যদিকে, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও চট্টগ্রামের হালদা নদীতে মা মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম সফল হয়েছে। এ বছর হালদা থেকে প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও মাছ চাষিদের অনেকেই জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টি ও নদীর পানির স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ এলাকায় অন্তত রবিবার (১ জুন) পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এই বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ও নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোতে তাৎক্ষণিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে এ পরিস্থিতিতে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিকভাবে আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর সারাদেশবাসীর নজর রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি হলেও বন্যা ও পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগে যেন প্রাণহানি বা বড় ক্ষতি না হয়, সে জন্য সবাইকে সচেতন ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ