
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিনের গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত দেশের শিল্প খাতে আজ (৩১ মে, শনিবার) থেকেই স্বস্তি ফিরতে শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি জানান, সমুদ্রবন্দর এলাকায় খারাপ আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন পরিস্থিতি অনুকূলে এসেছে, ফলে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্যাস ঘাটতি মোকাবেলায় চারটি অতিরিক্ত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কার্গো আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার সকালে সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান। উপদেষ্টা জানান, “আমরা গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে আজ থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে গড়ে দৈনিক ৫০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট প্রতিদিন) গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে, যা খুব শিগগিরই আরও ১০০ থেকে ১৫০ এমএমসিএফডি পর্যন্ত বাড়বে বলে আশা করছি।”
তিনি বলেন, “সমুদ্র উত্তাল থাকায় এলএনজি টার্মিনালে জাহাজ থেকে গ্যাস খালাস করা সম্ভব হচ্ছিল না। আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে আসায় খালাস শুরু হয়েছে এবং এতে করে পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতির দিকে যাবে।” উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার শিল্পাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় গ্যাস সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে, যার ফলে উৎপাদনে ভাটার টান পড়ে এবং রপ্তানি আদেশ বাস্তবায়নেও বাধা সৃষ্টি হয়।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা জানান, বর্তমান সরকার দেশের শিল্প ও রপ্তানিমুখী খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা শিল্পের বিকাশ চাই, উৎপাদনমুখী অর্থনীতি চাই, আর তার জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অপরিহার্য। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই এখন থেকে গ্যাস সরবরাহের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।”
শিল্প এলাকায় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে উপদেষ্টা প্রথমে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কার্যালয় পরিদর্শন করেন এবং সেখানে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরবর্তীতে তিনি আশুলিয়া ও ডিইপিজেড (ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) ঘুরে শিল্প কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
এ সময় চলমান শ্রমিক-কর্মচারী আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আগামীকাল (১ জুন) তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
তিনি আরও বলেন, “এ নিয়ে আন্দোলন করে কোনো লাভ নেই। কেউ কেউ নাশকতা করে গতবার ২৬-২৭টি স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো ছাড়া এসব আন্দোলনের আর কোনো ফল হয় না। সরকার অবশ্যই এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে এবং করবে।”
জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, আশুলিয়া ছাড়াও তিনি মির্জাপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, ভালুকা ও টঙ্গীর শিল্পাঞ্চলগুলোতে আজকের মধ্যে পরিদর্শনে যাবেন। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
পরিদর্শনে উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, বিইপিজেড এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তৈরি পোশাক, চামড়া, সিরামিক ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাঘাত কমে আসবে। তবে তারা মনে করছেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন এলএনজি সরবরাহ চেইন, ভিন্ন উৎস থেকে গ্যাস আমদানি এবং স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে।
অন্যদিকে, শিল্পমালিকরা সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তাদের দাবি, গ্যাস সরবরাহে বৈষম্য, চাপের ওঠানামা এবং দৈনিক ভিত্তিতে সরবরাহে অনিশ্চয়তা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস বরাদ্দ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সব মিলিয়ে, আজ থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর সরকারি ঘোষণায় দেশের শিল্পখাতে কিছুটা হলেও স্বস্তির আবহ ফিরে এসেছে। এখন অপেক্ষা—এই ঘোষণার বাস্তব রূপ কীভাবে দ্রুত মাঠে কার্যকর হয়, তার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ