
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় দলের ইংলিশ-লিগ তারকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী ঢাকায় পা রেখেছেন। তার ফেরাকে ঘিরে বাংলাদেশ ফুটবলে যেন নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। প্রবাসে জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং খেলার মধ্যে থেকেও দেশের টানে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন হামজা। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে জাত চিনিয়ে দিলেও দেশের মাঠে এখনও পা রাখেননি। এবার সেই অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে।
আজ সোমবার (২ জুন) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার। যদিও তার ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের বদলে ১০টা ৫৫ মিনিটে অবতরণ করে। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি জাতীয় দলের টিম হোটেলে চলে যান তিনি। সেখান থেকে পরে অনুশীলনে যোগ দেবেন।
ফুটবল অঙ্গনে তার আগমনকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই ছিল উচ্ছ্বাস, ছিল অপেক্ষা। বিমানবন্দরে নামার পরই সংবাদকর্মীদের ভিড় তাকে ঘিরে ধরে। সেখানে নিজের প্রত্যয় জানান দেন হামজা চৌধুরী। দেশের হয়ে মাঠে নামতে চাওয়া, জয়ের স্বপ্ন দেখা আর দেশের ফুটবলে নতুন প্রাণ ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে তিনি বললেন, "আমাদের ভালো সুযোগ আছে। দুটো ম্যাচই আমরা জিতব ইনশাআল্লাহ।"
জাতীয় দলের সূচি অনুযায়ী, বাংলাদেশ আগামী ৪ জুন একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে ভুটানের বিপক্ষে। এরপর ১০ জুন রয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার প্লে-অফের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর। দুটি ম্যাচই হবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
এই দুই ম্যাচ সামনে রেখেই বাংলাদেশ দলে ডাক পেয়েছেন হামজা। যদিও আগামী পরশু ভুটানের বিপক্ষে তার মাঠে নামা নিশ্চিত নয়। দলের কোচিং স্টাফ তার ফিটনেস, ক্লাব মৌসুম শেষে ক্লান্তি ও দলের কৌশলগত প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি খেলবেন কি না।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ইতিমধ্যেই ২৬ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে। এই দলে জায়গা পেয়েছেন দেশের বর্তমান সেরা ফুটবলাররা, সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কয়েকজন প্রবাসী ফুটবলারও। হামজা ছাড়াও যুক্ত হয়েছেন ফাহমেদুল ইসলাম, যিনি ইতোমধ্যেই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। আরেক প্রবাসী খেলোয়াড় সামিত সোম আসবেন আগামীকাল ভোরে।
জাতীয় দলের প্রধান কোচের পরিকল্পনায় রয়েছে একটি শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠন করা, যারা শুধু এ ম্যাচ দুটি নয়, সামনে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সেই পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন হামজা চৌধুরী। শুধু পারফরম্যান্স নয়, তার ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতা দলের তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য হতে পারে দিকনির্দেশক।
হামজার অভিষেক ম্যাচ হয়েছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের শিলংয়ে, এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে। সেদিন স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দারুণ ছন্দে ছিলেন তিনি। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিডফিল্ডে তার দৃঢ় উপস্থিতি নজর কেড়েছিল সমর্থকদেরও। সেই ম্যাচের পর থেকেই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়ে—কবে দেশের মাঠে খেলবেন হামজা?
সেই অপেক্ষার দিন হয়তো আর বেশি দীর্ঘ হবে না। ঢাকায় প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ম্যাচ ঘিরে টিকিটের চাহিদাও বাড়তে পারে। এই ম্যাচে শুধু জয় নয়, দেশের ফুটবলে নতুন এক অধ্যায় শুরুর প্রত্যাশাও দেখছেন অনেকে।
বাংলাদেশে ফুটবলকে ঘিরে এমন উত্তেজনা সাধারণত খুব বেশি দেখা যায় না। তবে হামজা চৌধুরীর মতো একজন খেলোয়াড়ের আগমন, তার আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য ও মাঠে পারফরম্যান্স ফুটবলপ্রেমীদের আশা জাগিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়মিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলে আন্তর্জাতিক মানের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।
বাংলাদেশ দল এখন যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তার লক্ষ্য শুধু এই দুটি ম্যাচ নয়—দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা। আর সেই অভিযাত্রায় প্রথম ধাপ হতে যাচ্ছে আগামী ৪ ও ১০ জুনের ম্যাচ দুটি।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, ঢাকায় তার প্রথম ম্যাচেই মাঠ কাঁপাতে পারেন হামজা চৌধুরী। সেই প্রত্যাশায় এখন ফুটবলপ্রেমীরা প্রহর গুনছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ