
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে। সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ড. ইউনূস নিজেই ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সবাই আজ এখানে একত্রিত হয়েছি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য। আমি আশাবাদী, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হবে এবং তার মাধ্যমে আমরা একটি যুগান্তকারী ও সুচিন্তিত জুলাই সনদ প্রস্তুত করতে সক্ষম হবো।’ তিনি বলেন, ‘সরকারও আশা করে যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব দূরীকরণ সম্ভব হবে এবং ঐকমত্যের মাধ্যমে এই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত খুশি যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিনিধিরা এই ঐকমত্য গঠনে আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দেখিয়েছেন। এটি দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে শেষ হবে। এই মেয়াদের মধ্যে জুলাই মাসে অবশ্যই জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। এজন্য কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি সংযোজন করেন, ‘আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পবিত্র এবং এই দায়িত্ব পালন করতে আমাদের সফল হতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু হয় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে। এতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনরা। সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকারি প্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ পাঁচটি মূল সংস্কারের সুপারিশ পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করা।
এর আগে, প্রথম দফা সংলাপ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চলে, যার মধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যত রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গভীর আলোচনা করেন।
সংবিধানের প্রাসঙ্গিক সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, বিচারব্যবস্থার উদারায়ন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ মূল সংস্কারগুলোর উপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব সংস্কার দেশের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জনগণের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য কমিশন সদস্যরা বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ গঠন ও ঘোষণা করলে তা হবে দেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক, যা ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়ে দেবে এবং শাসন ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের পথ সুগম করবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক সংস্কারের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে, যা দেশের গণতন্ত্র ও শাসনতন্ত্রকে আরো মজবুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ