
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ঢল সামাল দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঈদের পরে সাতদিনের আন্তঃনগর ট্রেনের ফিরতি টিকিট অগ্রিম বিক্রি করছে। এই টিকিট বিক্রির ধারাবাহিকতার শেষ দিনে, আজ বুধবার (৫ জুন), অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে ১৫ জুনের ট্রেন যাত্রার টিকিট, যা ফিরতি যাত্রার শেষ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের গ্রামের বাড়িতে গেছেন। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসতে এই বিশাল যাত্রীচাপ মোকাবিলায় আগেভাগেই ফিরতি টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। বিক্রির শুরু থেকেই প্রতিদিন নির্দিষ্ট এক দিনের টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত করা হচ্ছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ মে বিক্রি হয় ৯ জুনের টিকিট, ৩১ মে বিক্রি হয় ১০ জুনের, ১ জুন বিক্রি হয় ১১ জুনের, ২ জুনে ছিল ১২ জুনের টিকিট, ৩ জুন বিক্রি হয় ১৩ জুনের, ৪ জুন ১৪ জুনের, এবং আজ ৫ জুন বিক্রি হচ্ছে ঈদের ফিরতি যাত্রার শেষ দিনের অর্থাৎ ১৫ জুনের টিকিট।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে সব আন্তঃনগর ট্রেনের শতভাগ আসনের টিকিট এবারও অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকেই রেলওয়ের নির্ধারিত টিকিট প্ল্যাটফর্মে (railway.gov.bd ও Shohoz অ্যাপ) এই বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ও দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে সম্পূর্ণ অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে করে ঘরে বসেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা, এবং প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক স্বচ্ছ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের এই বিশেষ ব্যবস্থার অধীনে বিক্রি হওয়া টিকিটগুলো ফেরতযোগ্য নয়। অর্থাৎ যাত্রীরা টিকিট কিনে যাত্রা বাতিল করলে সেই টিকিট ফিরিয়ে দিয়ে টাকা ফেরত পাবেন না। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে করে কালোবাজারি রোধ হয় এবং টিকিট অপব্যবহারের সুযোগ না থাকে।
রেলওয়ে জানিয়েছে, প্রতিজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ চারটি আসনের টিকিট কিনতে পারবেন। তবে একাধিক টিকিট নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি আসনের জন্য যাত্রীদের নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য জমা দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে, একটি নির্দিষ্ট আইডি দিয়ে মাত্র একবার টিকিট কেনা হচ্ছে এবং একটি পরিবার বা গ্রুপ একইসঙ্গে যাত্রার সুযোগ পাচ্ছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রীচাপ সামাল দিতে বিভিন্ন ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত কোচ সংযুক্ত করা হয়েছে। তবুও সীমিত আসনের কারণে অনেকেই নির্ধারিত দিনে টিকিট পেতে পারছেন না। বিশেষ করে ঈদের পরদিন থেকে শুরু করে ১৩-১৫ জুনের টিকিটের ওপর অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা গেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা এবং পার্বতীপুরমুখী ট্রেনগুলোতে যাত্রীচাপ সবচেয়ে বেশি। এসব রুটে অতিরিক্ত টিকিট চাহিদা থাকায় বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে টিকিট বিক্রিতে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) টিকিট চেকিং ও নজরদারিতে রয়েছে। আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেক সময় ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে কালোবাজারিরা টিকিট কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করার চেষ্টা করে। এবার রেলওয়ে এমন চক্র শনাক্ত করতে স্বয়ংক্রিয় বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তিগত নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে।
এছাড়া, রেলমন্ত্রী নিজেই কয়েক দফা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “ঈদের টিকিট নিয়ে কেউ কোনো অনিয়ম করলে বা অবৈধভাবে টিকিট সংগ্রহ করে অন্যকে বেশি দামে বিক্রি করলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো আপস করা হবে না।”
রেলওয়ের ফিরতি টিকিট বিক্রির শেষ দিনে যারা এখনো টিকিট সংগ্রহ করেননি, তারা শেষ সুযোগ হিসেবে আজকের অনলাইন সেশনে যুক্ত হচ্ছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে টিকিট কেটে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে বাস ও লঞ্চে ফেরার বিকল্প পরিকল্পনাও করে রেখেছেন, তবে অধিকাংশই ট্রেনকেই নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সময়ানুগ ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
এবারের ঈদে ট্রেনযাত্রীদের একটি বড় অংশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও, সার্ভার স্লো হওয়া, অ্যাপ ক্র্যাশ করা এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই ‘সোল্ড আউট’ দেখানোর অভিযোগও এসেছে। যাত্রীদের মতে, টিকিট কাটার সময় সার্ভারের গতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
রেলওয়ে বলছে, প্রতিবারই চাহিদার তুলনায় টিকিটের সংখ্যা সীমিত থাকে, এবং কয়েক লক্ষ ব্যবহারকারী একসঙ্গে লগইন করলে সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে সিস্টেম কার্যকরভাবেই চলেছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
চলতি জুন মাসেই ঈদুল আজহার প্রধান উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় রেলওয়ে এবং অন্যান্য পরিবহন সংস্থাগুলোর ওপর বাড়তি চাপ দেখা যাচ্ছে। ঈদের আগের ও পরের এই সাতদিন ঘরমুখো এবং কর্মস্থলমুখী মানুষের অসংখ্য যাত্রায় দেশের অন্যতম প্রধান যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে রেলওয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে রেলওয়ের এই বিশেষ টিকিট বিক্রি ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষ কার্যকর মনে করলেও, ভবিষ্যতে আরও টেকসই ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ