
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শনে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত ও তৎপর রয়েছে, এবং ঈদের সময়ে জননিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে গাবতলীর কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পশুর সরবরাহ ও বাজারদর পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি বলেন, “আমি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান হিসেবে বহু বছর দায়িত্ব পালন করেছি, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি—বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করছেন, কোথাও কোনো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাই ঈদের এই সময়টি মানুষ যেন নিরাপদে কাটাতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্থিতিশীল থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে আপনাদের, অর্থাৎ গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা শুধু সরকারের কাজ নয়, এটা সামাজিক দায়িত্বও বটে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই, আপনারা সাংবাদিকরা মাঠে থাকেন, সব জায়গায় যাতায়াত করেন—আপনাদের চোখে কি নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি আছে? যদি থাকে, জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব।”
হাটে পশুর দাম প্রসঙ্গে জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি বাজার ঘুরে দেখেছি, এ বছর গরুর দাম তুলনামূলকভাবে গত বছরের তুলনায় একটু কম। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন যে দাম রিজনেবল, অর্থাৎ সহনীয় পর্যায়ে আছে। সবার জন্যই কেনাকাটা সহজ হয়েছে।”
তবে বড় গরুর বিক্রি কিছুটা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি ব্যতিক্রমী ভঙ্গিতে বলেন, “আগে দুর্নীতির টাকায় অনেকের পকেট ভর্তি থাকত। তখন তারা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিশাল বিশাল গরু কিনত। এখন তো দুর্নীতির টাকা নেই, তাই বড় গরু কিনতে মানুষ ভয় পাচ্ছে বা পারছে না। বিশেষ করে যাদের কাছে ব্ল্যাকমানি ছিল, তারা এখন আর আগের মতো সাহস করে বড় গরু কিনতে পারছে না।”
তবে সবাই যে বড় গরু কিনতে পারছেন না, তা নয় বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে অনেক সৎ উপার্জনকারী লোক আছেন, যারা নিয়মিত কর দেন, ব্যবসা করেন, কিংবা প্রবাস থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠান। তাদের অনেকেই বড় গরু কিনছেন। আমি দেখেছি, বড় বড় ব্যবসায়ী যারা সৎ পথে আয় করেন, তারা হাটে এসে বড় গরু কিনে নিচ্ছেন।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, পশুবাহী যানবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সারাদেশে কোরবানির পশুর হাটগুলো আমরা মনিটর করছি। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, ও স্থানীয় প্রশাসন সকলে মিলেই কাজ করছে যাতে কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে না পারে। অনলাইনে পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রেও প্রতারণা ঠেকাতে সাইবার ইউনিট কাজ করছে।”
পরিশেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঈদের সময় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের এই সময়ে আমরা চাই সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক। কেউ যেন গুজবে কান না দেন। কেউ যেন ধর্মীয় উৎসবকে অজুহাত বানিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।”
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি একদিকে যেমন আশ্বস্ত করেছেন জনসাধারণকে, তেমনি সতর্ক করে দিয়েছেন দুর্নীতি করে অর্থোপার্জনের যুগ শেষ—এখন সৎ উপার্জনের সময়। তাই বড় গরু কিনতে না পারলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই, যার যা সামর্থ্য, তাতেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব।
বাংলাবার্তা/এমএইচ