
ছবি: সংগৃহীত
আজ ৯ জিলহজ, বৃহস্পতিবার—পবিত্র হজের সেই মহিমান্বিত দিন, যেদিন আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে লাখো লাখো মুসলিম মহান আল্লাহর সামনে হাজিরা দেন, চেয়ে নেন মাগফিরাত, রহমত ও আত্মশুদ্ধি। আরাফাতের সমতল প্রান্তর আজও মুখরিত ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে, যা কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের ঐক্য, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের চিরন্তন প্রতীক হয়ে থাকবে।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু মিনায়
পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে। এই বছরও মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীদের মিনার তাঁবুতে নেওয়া শুরু করে সৌদি সরকারের অনুমোদিত হজ পরিচালনাকারীরা, যাদের বলা হয় ‘মুয়াল্লিম’। হাজিরা মক্কায় নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরাম বেঁধে মিনার পথে রওয়ানা হন এশার নামাজের পরপরই। বুধবার সকাল থেকে মিনার তাঁবুগুলোতে জমায়েত হন ৮৫ হাজার ১৬৪ জন বাংলাদেশি হজযাত্রীসহ বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মুসলমান।
মিনায় হাজিরা কাটান দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং রাতযাপনের মধ্য দিয়ে। এটি হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। তাঁবুর শহর মিনায় সেই ধবনিতেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইনাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক”। সব প্রশংসা, নিয়ামত ও সাম্রাজ্য কেবল আল্লাহরই—এই বার্তায় তারা মুখর ছিল সারাক্ষণ। জিকির, তাসবিহ, তালবিয়া ও কোরআন তিলাওয়াতে ডুবে থাকা মুসল্লিরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আত্মনিবেদন করেন।
বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সেবায় মিনায় দায়িত্ব পালন করে ১৮টি টিম, যারা হাজিদের নিরাপত্তা, খাবার, চিকিৎসা ও দিকনির্দেশনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।
আরাফাতের ময়দানে আজ হাজিরা দিবেন মুসল্লিরা
৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হন। যদিও ভিড় ও যানজট এড়াতে আগের রাত থেকেই অনেককে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাফাতের ময়দান, যেখানেই বিদায় হজের স্মৃতিমাখা ইতিহাস রচিত হয়েছিল। ১৪০০ বছর আগে এই প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দিয়েছিলেন তার অমর বিদায় হজের ভাষণ, যেখানে মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা, সমাজ ন্যায়ের বার্তা প্রতিধ্বনিত হয়েছিল।
চার বর্গমাইল আয়তনের তিন পাহাড়ঘেরা এই বিশাল সমতল ভূমির অন্যতম আকর্ষণ ‘জাবালে রহমত’—রহমতের পাহাড়। এই পাহাড়ের পাদদেশেই সমবেত হন মুসল্লিরা। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন, করবেন কান্নাকাটি ও দোয়া। ইসলামী শরিয়ত মতে, আরাফাতে অবস্থান হজের মূল রোকন, এটি বাদ পড়লে হজ শুদ্ধ হয় না। সে কারণে যারা মক্কার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় আজ আরাফাতে।
হজের খুতবা ও আন্তর্জাতিক অনুবাদ কার্যক্রম
আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে আজ হজের খুতবা প্রদান করবেন মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ হুমাইদ। তার প্রদত্ত খুতবা শুধু আরবি ভাষায় নয়, বিশ্বের ২০টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বাংলায় অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি আলেম—ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র।
এই অনুবাদ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের হাজিরা এবং বিশ্বজুড়ে লাখো বাংলাদেশি মুসলমান হজের খুতবার তাৎপর্য বুঝে নিতে পারবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ