
ছবি: সংগৃহীত
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের আকাশে সক্রিয় রয়েছে মেঘ ও বৃষ্টির চিত্র। দেশের প্রায় সব বিভাগেই বিভিন্ন মাত্রায় ঝরছে বৃষ্টি, কোথাও কোথাও হচ্ছে বজ্রসহ ভারী বর্ষণ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই বৃষ্টির ধারা আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে আগামী শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার দিন দেশের কয়েকটি বিভাগে ঝরতে পারে বৃষ্টি, যা ঈদের পরিকল্পনায় আংশিক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পাঁচ দিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঈদের দিন চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য বিভাগে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এই সময়ে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, তবে বড় কোনো আবহাওয়া বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই।
আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে—বাংলাদেশের ওপর মৌসুমী বায়ু কম সক্রিয় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে এটি দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে দেশের চারটি বিভাগ—রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও সিলেটের কিছু কিছু স্থানে এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশেই দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঈদের আগের দিন শুক্রবারও (৬ জুন) দেশের প্রায় সব বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ দিন দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, তবে গরমের প্রবণতা মারাত্মক হবে না।
সবার মনেই প্রশ্ন—ঈদের দিন কি আবহাওয়া ভালো থাকবে? আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য বিভাগে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে এবং আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে।
এই বৃষ্টির পূর্বাভাস ঈদের জামাত, পশু কোরবানির কাজ এবং পারিবারিক মিলনমেলা কিছুটা ব্যাহত করতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এই বৃষ্টিপাত সম্ভাব্যভাবে “দু-এক জায়গা” ও “হালকা থেকে মাঝারি” মাত্রার হবে, তাই সার্বিকভাবে ঈদের আমেজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
রবিবার (৮ জুন) এবং সোমবার (৯ জুন) দেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। পাশাপাশি আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা এবং তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ফলে যারা ঈদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের বেশিরভাগ জায়গায় আবহাওয়ার বাধা পড়বে না।
গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর সারাদেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তথ্য প্রকাশ করেছে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ সময়ের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়, যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পরিমাণ সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে, অর্থাৎ ভ্যাপসা গরমের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত স্বস্তিদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পূর্বাভাস থেকে বোঝা যাচ্ছে, ঈদের সময় আবহাওয়ার আচরণ একেবারে শুষ্ক থাকবে না। বিশেষ করে যারা উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত আদায়ের পরিকল্পনা করছেন, কিংবা গৃহপালিত পশু কোরবানির জন্য বাড়ির বাইরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের জন্য হালকা প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।
সাথেই আবহাওয়া সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেহেতু আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তনশীল, তাই হালনাগাদ তথ্য জানতে স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি বা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
ঈদ হোক আনন্দের, নিরাপত্তা ও সাবধানতার মাঝে — এই প্রত্যাশায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ