
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য নাহিদ ইসলাম সোমবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, তারা স্পষ্টভাবে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন যে, জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করা উচিত নয়। এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের আগে মৌলিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া।
বৈঠকে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সরকারের গতিশীলতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলা এবং জুলাই সনদ প্রণয়নের অগ্রগতি নিরীক্ষণ। নাহিদ ইসলাম জানান, ‘সরকার যে সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রকাশ করার কথা দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছি। আমরা জোর দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যেই এই সনদটি জারি করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার আমরা স্পষ্ট করতে চেয়েছি যে জুলাই মাস আসন্ন, যা গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির সময়সীমা। ৫ আগস্টের আগে সকলের সম্মিলিত স্বাক্ষর গ্রহণ করে জুলাই সনদ কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি। এই সনদই হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তাই আমরা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি, এখনো আমরা ১৬ বছর অপেক্ষা করেছি, ১০ মাস অপেক্ষা করেছি, দুই মাস অপেক্ষা করতেই প্রস্তুত। এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ কার্যকর করা হলে তার পরেই নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা কমিশনকে জোর দিচ্ছি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনী আইনগুলো সংস্কার করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা কমে এসেছে এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও অবাধতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি। কারণ নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা সুনিশ্চিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে এক ঐতিহাসিক দলিল, যা গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এবং শহীদ ও আহতদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়। এটি পরবর্তী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং ইতিহাসের সঠিক পরিচয় তুলে ধরবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ হবে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের রূপরেখা। এই সনদে নির্ধারিত হবে কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন এবং বিচার ও শাসন ব্যবস্থার উন্নতি কিভাবে সম্ভব তা নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা আসবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকারি পর্যায় থেকে এই তিনটি মূল ইস্যুতে সমাধান মিলবে, যার মধ্যে রয়েছে - জুলাই সনদ প্রকাশ, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার। এই পদক্ষেপগুলোই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুদৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যত নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আনবে।’
পরবর্তীতে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করবো যে, নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে যেন যথাযথ সময় ও সুযোগ দেওয়া হয়। এতে করে নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বললেন, ‘আমরা জানি, দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তনের প্রত্যাশায় রয়েছে। তাই আজকের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আমরা একটি সুসংগঠিত ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাব। তবে এর জন্য সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন।’
এই বৈঠক ও নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, আগামী নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে আগে দেশের শাসন ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া জরুরি। নাহিদ ইসলাম বিশ্বাস করেন, জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং সকল পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য বজায় থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ