
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বিচার বিভাগে ব্যাপক রদবদলের অংশ হিসেবে একযোগে ২৫২ জন বিচারককে বদলি করা হয়েছে। এই বহুল আলোচিত বদলির আদেশ সোমবার (২ জুন) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। একই সঙ্গে বিকেলে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় এই বদলি ও পদোন্নতির বিস্তারিত তালিকা।
এই বিপুল সংখ্যক বদলির মাধ্যমে বিচার প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল সরকার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এটি বিচারব্যবস্থার দক্ষতা ও গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গৃহীত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, যা বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে।
বদলি হওয়া বিচারকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে রয়েছেন সহকারী ও সিনিয়র সহকারী জজরা। সর্বমোট ১৬২ জন বিচারক এই দুই পদে বদলির আদেশ পেয়েছেন। সাধারণত দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও থানা পর্যায়ের আদালতে দায়িত্ব পালনকারী এই বিচারকরা জনগণের বিচারপ্রাপ্তির প্রথম ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া ৩৮ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকেও বদলি করা হয়েছে, যারা জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এই পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন বদলি আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ গুরুত্বপ্রাপ্ত বিবেচনায় হয়, কারণ তারা হত্যাসহ গুরুতর ফৌজদারি মামলাসমূহে রায় প্রদান করেন।
এই বদলির পাশাপাশি ১২ জন বিচারককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও কোন পদ থেকে কোন পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বিশদভাবে উল্লেখ নেই, তবে জানা গেছে পদোন্নতির তালিকায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র সহকারী জজকে যুগ্ম জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে।
বদলি ও পদোন্নতির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের জারি করা তিনটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে— ‘বিজ্ঞপ্তি-১’, ‘বিজ্ঞপ্তি-২’ এবং ‘বিজ্ঞপ্তি-৩’। এগুলোর প্রতিটিতে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের নাম, পদ, পূর্বের কর্মস্থল ও নতুন কর্মস্থলের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিচারকগণকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিগুলো জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট আদালতের ব্যবস্থাপকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যাতে বদলির প্রক্রিয়া ও আদেশ সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বৃহৎ পরিসরের বদলি ও পদোন্নতি বিচার বিভাগের স্বাভাবিক রুটিন কার্যক্রমের অংশ হলেও, এর মাধ্যমে বিচারকদের কাজের গতি বাড়ানো, ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং বিচারিক ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা প্রধান উদ্দেশ্য।
বিচার বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বহুদিন ধরে একই স্থানে কর্মরত বিচারকদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতমূলক আচরণ কিংবা অকার্যকারিতা দেখা দেওয়ার অভিযোগ থাকায় একযোগে বদলির এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আইন ও বিচার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচারকদের নিয়মিত বদলি হলে একদিকে যেমন পেশাগত বৈচিত্র্য অর্জন সম্ভব হয়, তেমনি বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকে। তারা মনে করছেন, বিচারক বদলির এই প্রক্রিয়া যেন দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিত করাই হবে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মহল এবং আদালত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই রদবদল বিচার ব্যবস্থার জটিলতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে, জনসাধারণের মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকদের সততা ও দক্ষতাই হবে মূল নিয়ামক।
সারা দেশে একযোগে ২৫২ জন বিচারকের বদলি ও ১২ জনের পদোন্নতির মাধ্যমে সরকার বিচার প্রশাসনের বড় রকমের পুনর্গঠন করল। এই পরিবর্তন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত গতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্যতা আসবে কি না, তা নির্ভর করবে বিচারকদের পেশাগত নিষ্ঠা, নৈতিকতা ও দক্ষতার ওপর। সময়ই দেবে এর সঠিক মূল্যায়ন।
নামের তালিকা দেখতে বিজ্ঞপ্তি-১, বিজ্ঞপ্তি-২ ও বিজ্ঞপ্তি-৩ -এ কিক্ল করুন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ