
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন অর্থবছরের শুরুতে বড় সুখবর দিয়েছে সরকার। আগামী ১ জুলাই ২০২৫ থেকে সরকারি চাকরিজীবী, স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ নামক একটি আর্থিক প্রণোদনা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। মঙ্গলবার (৩ জুন) এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের প্রবিধি-৩ শাখা।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনা স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং ২০১৫ সালের জাতীয় বেতনস্কেল অনুসারে বেতনভুক্ত সরকারি, বেসামরিক, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা কার্যকর হবে। একই সুবিধা পাবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ বাহিনী এবং পেনশনভোগীরাও।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই ‘বিশেষ সুবিধা’ মূলত একটি অতিরিক্ত আর্থিক প্রণোদনা যা চাকরির গ্রেড অনুসারে ভিন্ন হারে প্রদান করা হবে।
গ্রেড ১ থেকে ৯ পর্যন্ত চাকরিরতদের জন্য প্রতি বছর জুলাই মাসের ১ তারিখে মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে।
গ্রেড ১০ থেকে ২০ পর্যন্ত চাকরিরতরা পাবেন মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে এই সুবিধা।
তবে ন্যূনতম পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে—চাকরিরতদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১,০০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা।
এই অর্থ মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত না হলেও প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময় (১ জুলাই) এই অর্থ ‘বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে প্রদান করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ঠিক কোন কোন শ্রেণির কর্মচারী বা পেনশনভোগী কীভাবে এই সুবিধা পাবেন।
১. চাকরিরত সরকারি কর্মচারী: ১ জুলাই থেকে প্রতিবছর মূল বেতনের ওপর গ্রেডভিত্তিক হারে (উল্লিখিত ১০% ও ১৫%) এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
পিআরএল (অবসর-উত্তর ছুটি)-এ থাকা কর্মচারী: পিআরএলে যাওয়ার আগে যে বেতন পেয়েছেন, সেটির ভিত্তিতে নির্ধারিত হারে সুবিধা প্রযোজ্য হবে।
পেনশনভোগী ও পুনঃস্থাপিত পেনশনার: বর্তমান প্রাপ্য পেনশনের ওপর নির্ধারিত হারে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
এককালীন আনুতোষিক গ্রহণকারীরা: যারা পেনশনের ১০০% অংশ এককালীন গ্রহণ করেছেন এবং এখনো পুনঃস্থাপনযোগ্য নন, তারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন না।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী: তাদের চুক্তি শুরুর আগে সর্বশেষ মূল বেতনের ভিত্তিতে সুবিধাটি প্রযোজ্য হবে, তবে পেনশনভোগী হলে বেছে নিতে হবে কোন ভিত্তিতে সুবিধা গ্রহণ করবেন।
সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারী: তাদের বরখাস্তের আগে যে বেতন ছিল তার ৫০% এর ওপর গ্রেডভিত্তিক হারে এই সুবিধা মিলবে।
বিনা বেতনে ছুটিতে থাকা কর্মচারী: এই ধরনের কর্মচারীরা সুবিধার আওতায় থাকবেন না।
সরকারি রাজস্ব খাত থেকে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতীত অন্যান্য স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের জন্য এই সুবিধা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যয় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বাজেট থেকেই বহন করতে হবে। অর্থাৎ, সরকারের সরাসরি অনুদানে পরিচালিত নয়—এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই নিজস্ব বাজেট থেকে এ খরচ নির্বাহ করতে হবে।
২০২৩ সালের ১৮ জুলাই অর্থ বিভাগের যে আদেশ (নং ০৭.০০.০০০০.১৬১,৯৯.০১০,২৩-১৩২) জারি হয়েছিল, তা এই নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “জনস্বার্থে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো এবং এটি আগামী ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।”
এই সিদ্ধান্তকে সরকারি চাকরিজীবী সমাজের জন্য একটি বড় আর্থিক সহায়তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজারের বর্তমান অবস্থায় এই ধরনের প্রণোদনা কর্মীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বস্তি বয়ে আনবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
এটি শুধু কর্মরতদের নয়, বরং অবসরে থাকা ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে বলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এদিকে পেনশনভোগী ও পুনঃস্থাপিত পেনশনারদের অন্তর্ভুক্ত করায় অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে যারা এককালীন পেনশন তুলেছেন এবং এখনো পুনঃস্থাপনের আওতায় আসেননি, তাদের বাদ পড়ায় কিছুটা হতাশাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এই সুবিধা নিয়ে আরও সংশোধনী বা সম্প্রসারণ আসতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ