
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব ফুটবলের এক অবিসংবাদিত রাজা লিওনেল মেসি। বয়স বাড়ছে, কিন্তু ফুটবলে তার দাপট কমছে না এতটুকুও। বরং প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন আরও উঁচুতে। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলে চলেছেন দুর্দান্ত ফর্মে। আগের ম্যাচে জোড়া গোল করে দলের জয়ের পথে ফেরান মেসি। আর আজ রোববার সকালে (বাংলাদেশ সময়) সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আবারও করেছেন জোড়া গোল, সঙ্গে করিয়েছেন আরও দুটি গোল—সব মিলিয়ে একাই অংশ নিয়েছেন দলের পাঁচটি গোলেই। এর মধ্য দিয়ে মেসি ভেঙে দিয়েছেন আরেকটি বড় রেকর্ড—ইন্টার মায়ামির ইতিহাসে এখন তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা।
চেজ স্টেডিয়ামে ঘরের মাঠে কলম্বাস ক্রু’র বিপক্ষে ৫-১ গোলের বিশাল জয় তুলে নিয়েছে ইন্টার মায়ামি। ম্যাচে মেসির সরাসরি অবদান ৪টি গোলেই—দুটি নিজে করেছেন, দুটি করিয়েছেন। আর একটি গোল এসেছে তারই পাস থেকে। এর মাধ্যমে ইন্টার মায়ামির জার্সিতে তার মোট গোল সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১। ফলে আগের রেকর্ডধারী গঞ্জালো হিগুয়েইনের ২৯ গোলকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
খেলার মাত্র ১৩ মিনিটেই প্রথম গোল আসে মেসির পায়ে সাজানো এক নিখুঁত আক্রমণ থেকে। মাঝমাঠ থেকে তিনি চোখধাঁধানো এক লং পাস দেন সতীর্থ তাদেও আলেন্দেকে। আলেন্দে সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জালে বল পাঠান, ইন্টার মায়ামিকে এনে দেন লিড। কিন্তু প্রতিপক্ষের কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি নিজেই। কলম্বাস গোলরক্ষক নিকোলাস হাগেন বল ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পেরে সেটি ভুলবশত পাঠিয়ে দেন বক্সের কাছে থাকা মেসির পায়ে। এত বড় সুযোগ তিনি হাতছাড়া করবেন না—সরাসরি গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ২-০ ব্যবধানে।
২৪ মিনিটে আবারও গোল করেন মেসি। এবার মাঝমাঠ থেকে বল বাড়ান সের্হিও বুসকেতস, আর মেসি নিজের চিরচেনা মেজাজে বলটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল তুলে দেন জালে। দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে হ্যাটট্রিকের কাছাকাছি গেলেও এরপর আর গোল পাননি। তবে গোল করানোয় থেকেছেন সরব।
দ্বিতীয়ার্ধে একটু সামলে উঠে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে কলম্বাস ক্রু। ৫৮ মিনিটে সিজার রুভালকাবার একটি গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনে ৩-১ এ। তবে সে আশা বেশি সময় টেকেনি। মাত্র ৬ মিনিট পরই লুইস সুয়ারেজ গোল করে ব্যবধান ৪-১ করেন। গোলটির পেছনেও ছিল মেসির অবদান, যিনি প্রতিপক্ষের মধ্যমাঠ ছেদ করে বল বাড়ান আলেন্দের কাছে, সেখান থেকে আসে সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত পাস।
ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে আবারও আলো ছড়ান মেসি। ৮৭ মিনিটে মেসির পাস থেকে বল পেয়ে ফাফা পিকাল্ট গোল করে জয়কে করে তু্লে ধরেন ঐতিহাসিক। ৫-১ ব্যবধানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইন্টার মায়ামি।
ম্যাচে বল দখলে সামান্য এগিয়ে ছিল ইন্টার মায়ামি—৫১ শতাংশ। শট নেওয়ার দিক থেকেও এগিয়ে—মায়ামির ১৪ শটের মধ্যে ৭টি ছিল লক্ষ্যে, যেখানে কলম্বাস নিয়েছে ১২টি শট, কিন্তু মাত্র ১টি ছিল লক্ষ্যে। মূল পার্থক্যটা ছিল ফিনিশিংয়ে, যেখানে এককভাবে মেসি ছিলেন ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেওয়া তারকা।
এই জয়ের ফলে ইন্টার মায়ামির পয়েন্ট এখন ২৯, ১৮ ম্যাচে ৮ জয়, ৫ ড্র এবং ৩ হার নিয়ে। এমএলএসের ইস্টার্ন কনফারেন্সের পয়েন্ট তালিকায় তারা উঠে এসেছে তিন নম্বরে। শীর্ষে থাকা ফিলাডেলফিয়ার চেয়ে এখনো ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকলেও মায়ামি একটি ম্যাচ কম খেলেছে, ফলে শীর্ষে ওঠার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
৩১ গোল করে মেসি এখন ইন্টার মায়ামির ইতিহাসে এক নম্বর গোলদাতা। তার আগমনের পর দলটির চেহারাই পাল্টে গেছে। শুধু গোল নয়, অ্যাসিস্ট, খেলার নিয়ন্ত্রণ, আক্রমণের ছন্দ—সবকিছুতেই মেসির প্রভাব স্পষ্ট। বুসকেতস ও সুয়ারেজের সঙ্গে তার বোঝাপড়াও দিনকে দিন আরও জমাট হচ্ছে, যার সুফল পাচ্ছে মায়ামি।
বর্তমানে মেসি ২০২৪-২৫ মৌসুমে সবচেয়ে ধারাবাহিক ফর্মে থাকা ফুটবলারদের একজন। বয়স ৩৭-এর ঘরে পা দিলেও মাঠে তার গতি, কৌশল ও গোলের ক্ষুধা একটুও কমেনি। মেজর লিগ সকারে তার উপস্থিতি শুধু ইন্টার মায়ামিকেই নয়, গোটা লিগকেই দিচ্ছে নতুন মাত্রা। সমর্থক-ভিত্তি, আন্তর্জাতিক প্রচার, টেলিভিশন দর্শকসংখ্যা—সবখানেই মেসির প্রভাব দৃশ্যমান।
আগামী সপ্তাহে আরও কঠিন প্রতিপক্ষদের মুখোমুখি হবে ইন্টার মায়ামি। তবে বর্তমান ফর্ম ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে তারা যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। আর মেসি যদি এমনই আগুনে ফর্ম ধরে রাখেন, তবে এবারের এমএলএস মৌসুম হতে পারে তার আরেকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের অধ্যায়।
এমন পারফরম্যান্সেই প্রমাণ হয়—মেসি থেমে যাননি, থামতেও চান না। মাঠে তিনি এখনো এক ‘শিল্পী’, যিনি ফুটবল দিয়ে রচনা করে চলেছেন নতুন নতুন কাব্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ