
ছবি: সংগৃহীত
অর্থনীতির নতুন গন্তব্যে যাত্রার প্রতীক হিসেবে ছয়টি নতুন ডিজাইনের ব্যাংক নোটের ছবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক শেষে এই প্রতীকী হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ছয়টি নতুন নোটের নান্দনিক ডিজাইনের ছবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নতুন নোটগুলো শুধু কারিগরি ও নান্দনিক উৎকর্ষের প্রতিফলন নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্যকেও তুলে ধরবে।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, এ অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রতীকী। অর্থনৈতিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন, নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার অংশ হিসেবেই এই নতুন নোটসমূহের প্রবর্তনের প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মুদ্রা ডিজাইন এখন শুধু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যেই সীমাবদ্ধ নেই—তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির ছাপ।
জানা গেছে, নতুন ডিজাইনের নোটগুলোর প্রতিটিতে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ মানের জলছাপ, রঙ পরিবর্তনশীল কালি, ক্ষুদ্রাক্ষরিত লেখা (মাইক্রো-টেক্সট), হোলোগ্রাফিক স্ট্রিপ এবং অন্যান্য আধুনিক বৈশিষ্ট্য।
নোটগুলোতে জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের প্রতীকী চিত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে—
একটি নোটে থাকবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর প্রতিকৃতি,
আরেকটিতে পদ্মা সেতু,
তৃতীয়টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতীকচিত্র,
চতুর্থটিতে থাকবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার,
পঞ্চমটিতে মেট্রোরেল,
এবং ষষ্ঠটিতে থাকবে পরিবেশবান্ধব কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের চিত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, নতুন ডিজাইনের নোটগুলো প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে প্রদর্শন ও পরীক্ষামূলক প্রচার শেষে ধাপে ধাপে বাজারে চালু করা হবে।
তিনি বলেন, “এই নতুন নোট শুধু অর্থনৈতিক লেনদেনের একটি মাধ্যম নয়, বরং দেশের প্রতিচ্ছবি বহনকারী একটি সাংস্কৃতিক দলিল হয়ে থাকবে। নোটে থাকবে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রযুক্তি এবং সমসাময়িক উন্নয়নের মেলবন্ধন।”
গভর্নরের মতে, এই ডিজাইনগুলোর মাধ্যমে জাতির অতীত গৌরব এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার মধ্যকার সেতুবন্ধন তৈরি হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন নোট ডিজাইনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসার মধ্য দিয়ে কেবল অর্থনৈতিক কার্যক্রমই গতিশীল হবে না, এটি জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ককেও আরও ঘনিষ্ঠ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশ এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ছাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, এমনকি মুদ্রার মধ্যেও প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।”
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন নোটের ডিজাইন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এই নোটগুলো হবে আমাদের নতুন পথচলার প্রতীক। এগুলোর মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক মূল্য নয়, বরং জাতির আত্মপরিচয়ও বহন করবে।”
তিনি প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন, যেন নোট ছাপার প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার ও খরচ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি, জাল নোট নির্মূল করতে যথাসময়ে জনসচেতনতা কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেন।
একটি দেশের ব্যাংক নোট শুধু অর্থের বাহক নয়—এটি তার ইতিহাস, পরিচয় এবং ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষারও বাহক। বাংলাদেশের নতুন ডিজাইনের ছয়টি নোট সে বার্তাই বহন করছে।
নোটগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রচলন শুরু হলে জনগণের হাতে পৌঁছাবে এক নতুন রকমের অভিজ্ঞতা, যা শুধুই লেনদেনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং প্রতিদিনের ছোঁয়ায় ছড়িয়ে দেবে একটি জাতির গল্প।
বাংলাবার্তা/এমএইচ