
ছবি: সংগৃহীত
ইমার্জিং ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের হার আজ এক নতুন অধ্যায় লেখার মতো। ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তানের কাছে দুই ম্যাচে পরাজয়ের পর এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে যে ভাঙন দেখা গেল, তা যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য আরও হতাশাজনক। সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে বড় ব্যবধানে হারার পর বাংলাদেশ দল চেয়েছিলো দারুণ কিছু করতে পাকিস্তানে, কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেও একই রকম হতাশাজনক ছবি দেখে নিজেদের আশা দগ্ধ করে ফেলল তারা।
প্রথম ম্যাচে ২০১ রানের চ্যালেঞ্জ পেয়ে যেটি পুরো করতে পারেনি বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ম্যাচেও সে সংখ্যা ছিলো কঠিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১ রানের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ মাত্র ১৪৪ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ফলে ৫৭ রানের ব্যবধানে হেরে বাংলাদেশ সিরিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে দেখা গেলো বড় ধাক্কা। আগের ম্যাচের তুলনায় এই ম্যাচে পারফরম্যান্সে পরিস্কার অবনতি লক্ষ্য করা গেল।
বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ২০১ রান দিয়ে হেরেছিলো, আর দ্বিতীয় ম্যাচেও একই রান ধরে রাখতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে ১৬৪ রানের সংগ্রহ করতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ রান কম করে মাত্র ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায় দলটি। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে দলের ব্যাটিং বিভাগ এখনও পাকিস্তানের বলের বিরুদ্ধে পুরোপুরি সামলাতে পারেনি।
পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাহিবজাদা ফারহান। ৪১ বল খেলতে গিয়ে ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি, যার মধ্যে ছিল ৪টি চারে এবং ৬টি ছক্কা। তার ব্যাটিংয়ের কারণে পাকিস্তান ২০১ রান করে দলীয় স্কোর গড়ে। এছাড়াও হাসান নওয়াজ ২৬ বলে অপরাজিত ৫১ রান এবং মোহাম্মদ হারিস ২৫ বলে ৪১ রান করে পাকিস্তানের জয়ের ভিত মজবুত করেছেন।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল বেশ নিষ্প্রভ। হাসান মাহমুদ এবং তানজিম হাসান সাকিব দুজনেই ২টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন, তবে মোটামুটি ব্যয়বহুল বোলিংয়ে দলের বোঝা ভারি হয়েছিল। রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে মাত্র এক উইকেট পেলেও তার বোলিং ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল। বোলিং বিভাগে সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের বড় ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের জবাবি ব্যাটিং শুরুটা ছিল আশাব্যঞ্জক। তানজিদ হাসান ১৯ বলে ৩৩ রান করে ভালো শুরু দেন। তবে দলের বাকিরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। একমাত্র তানজিম হাসান সাকিব ৩১ বলে ৫০ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেন। কিন্তু ৬.৪ ওভার পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ একেবারে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায়। শুরু থেকেই চাপ সামলাতে না পেরে দল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায়।
৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পাকিস্তান এগিয়ে যাওয়ার কারণে এক ম্যাচ বাকি থাকলেও সিরিজ জিতে নিয়েছে স্বাগতিক দল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা এখন দুঃখ প্রকাশ করছেন দলের এমন দুর্বল পারফরম্যান্সের জন্য। অধিনায়ক লিটন দাস যদিও আত্মবিশ্বাস হারাতে চান না, মাঠের পারফরম্যান্সে তা পুরোপুরি ফুটে উঠছে না।
এখন সামনে একটি ম্যাচ বাকি থাকলেও তা সিরিজের দিক থেকে বাংলাদেশর কাছে বড় কিছু না। বরং পাকিস্তানের হাতে সিরিজের জয় নিশ্চিত হওয়ায় বাংলাদেশের সামনে নিজেদের পারফরম্যান্স উন্নত করার বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। লিটন দাসের নেতৃত্বে দলের এখন প্রয়োজন ধারাবাহিকতা ও মানসম্মত ক্রিকেটে ফিরে আসা, যা ভবিষ্যতের বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিবার আশা করছে, আগামী ম্যাচে দলের ক্রিকেটাররা তাদের সমর্থকদের হতাশ করবেন না এবং ভালো কিছু উপহার দিয়ে ফিরবেন মাঠ থেকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ