
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের সামগ্রিক জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আহরণের কার্যক্রমে মধ্যমেয়াদে একটি সুসংগঠিত এবং দীর্ঘস্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সোমবার (২ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিজেই অর্থমন্ত্রী না হয়েও বাজেট উপস্থাপন না করে একজন উপদেষ্টার মাধ্যমে তা সংসদে উপস্থাপিত হলো।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেশের জিডিপির ৯ শতাংশের সমান।”
তিনি আরও বলেন, সরকার রাজস্ব আহরণে কাঠামোগত সংস্কারে মনোযোগী হচ্ছে। এনবিআর-এর কার্যক্রমকে আরও দক্ষ, স্বচ্ছ ও টেকসই করতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি কর ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, কর প্রশাসনে স্বয়ংক্রিয়তা এবং ট্যাক্স ফাইলিং পদ্ধতিতে সরলীকরণ আনা হচ্ছে। এনবিআরকে একটি প্রোঅ্যাকটিভ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টার অংশ হিসেবে রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ বৃদ্ধি এবং করদাতাদের সুবিধা বৃদ্ধিতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবনায় কর অব্যাহতি সুবিধা সীমিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “অযৌক্তিক কর অব্যাহতি সংস্কার এবং ধাপে ধাপে কর অব্যাহতি হ্রাস করা হবে। এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে কর ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
ভ্যাট ব্যবস্থার সংস্কার নিয়েও বাজেটে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাটের হার পণ্য ও সেবাভেদে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য সৃষ্টি করে কর ন্যায্যতায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই "একক হারে ভ্যাট" বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক পণ্য ও সেবায় সমমানের ভ্যাট নির্ধারণের মাধ্যমে করপদ্ধতিকে আরও সহজবোধ্য ও ন্যায়সঙ্গত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারের মতে, বর্তমান রাজস্ব আহরণের হার উন্নয়নশীল অর্থনীতির তুলনায় কম হলেও এটি দ্রুত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে করজাল সম্প্রসারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, যারা করদাতা হওয়ার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও করের আওতায় আসেননি, তাদের শনাক্ত করে করব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এনবিআরের একটি পৃথক ইউনিট কাজ করছে।
এছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়। কর সংক্রান্ত নীতি ও প্রশাসনিক সংস্কারে সরকারের প্রতিশ্রুতি আরও একবার এ বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট রাজস্ব আহরণের দিক থেকে উচ্চাভিলাষী হলেও বাস্তবায়নযোগ্য বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা, যদি নির্ধারিত কাঠামোগত সংস্কার যথাযথভাবে কার্যকর করা যায়। রাজস্ব আদায়ের ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রসার এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা।
এই বাজেট বাস্তবায়নের ফলে কর-জিডিপি অনুপাত পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজস্ব ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ