
ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন এবং আরও অন্তত তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (৪ জুন) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার চুমুরদি ইউনিয়নের বাবলাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার শিকার যান দুটি হচ্ছে একটি মাহিন্দ্রা (ব্যাটারিচালিত যাত্রীবাহী যান) এবং একটি মিজান পরিবহণের যাত্রীবাহী বাস।
ঘটনাটি ঘটার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয়রা এবং জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ আবু জাফর। তিনি জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা দেয় এবং সকাল ৭টার মধ্যে তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাবলাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মাহিন্দ্রা যাত্রীবাহী একটি যান ও মিজান পরিবহণের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষটি ছিল এতটাই ভয়াবহ যে মাহিন্দ্রার সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই চারজন প্রাণ হারান। আহত তিনজনকে উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা পরিচয় শনাক্তে কাজ করছেন এবং নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিজান পরিবহণের বাসটি উচ্চগতিতে চলছিল এবং মাহিন্দ্রাটি বাবলাতলার মোড়ে ঘুরছিল ওই সময়। তখনই ঘটে যায় এই ভয়াবহ মুখোমুখি সংঘর্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ব্যস্ত সময়ে ঘটনাস্থলে লোকজনের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাহিন্দ্রাকে চাপা দিলে মুহূর্তের মধ্যে চারজন নিহত হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) মো. শাহীনুর রহমান বলেন, “আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। হতাহতদের উদ্ধার ও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে।”
ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন আরও কড়াকড়ি আরোপের কথা ভাবছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বাসগুলোর বেপরোয়া গতি, চালকদের অসচেতনতা এবং অপ্রশস্ত সড়কই এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তারা দুর্ঘটনাপ্রবণ মোড়গুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রিয়জন হারাচ্ছে অসংখ্য পরিবার। আজকের এই দুর্ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। নিহতদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
উল্লেখ্য, ভাঙ্গা উপজেলার বাবলাতলা এলাকা এর আগেও একাধিক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। তাই এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি চালক ও যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ