
ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবে ২০২৫ সালের হজের আনুষ্ঠানিকতা মঙ্গলবার (৭ জিলহজ) সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়েছে, যা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র এক ইবাদত। এবারের হজে অংশ নিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ১৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মিনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন এবং ইতোমধ্যে লাখো মানুষ সেখানে অবস্থান করছেন।
সৌদি সময় অনুযায়ী ৩ জুন রাত থেকে মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম বা নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে ইহরাম বাঁধা হাজিরা মিনার উদ্দেশে রওনা হন। মক্কা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরের এই উপত্যকায় পৌঁছেই শুরু হয় হজের প্রথম বড় আনুষ্ঠানিকতা—মিনায় অবস্থান। এই সময় পুরো মিনাজুড়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে পবিত্র আহ্বান: “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”, যা হাজিদের ঈমানী তীব্রতা ও আল্লাহর প্রতি তাদের গভীর আত্মসমর্পণকে প্রকাশ করে।
হজের ধারাবাহিকতায় মিনায় একরাত্রি যাপন শেষে হাজিরা বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে রওনা হবেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে। হজের মূল রুকন বা কেন্দ্রীয় উপাদান হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান। ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, আরাফাতে অবস্থান না করলে হজ সম্পন্ন হয় না। তাই ৯ জিলহজ আরাফার দিন হাজিরা সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। সেদিনই হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুতবা প্রদান করা হবে।
এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা প্রদান করবেন সৌদি আরবের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও সাবেক বিচারপতি শেখ সালেহ বিন হুমাইদ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। হজের খুতবা লাখো হাজির পাশাপাশি বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানও লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে শুনবেন।
আরাফাতে অবস্থান শেষে সূর্যাস্তের পর হাজিরা যাত্রা করবেন মুজদালিফার দিকে। সেখানে রাতযাপন ও শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহের পর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে তারা মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় ফিরে বড় শয়তানকে (জামারাতুল আকাবা) পাথর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি, চুল কাটা বা মুণ্ডনের পর মক্কায় ফিরে কাবা শরিফের তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ সম্পন্ন করবেন।
হজের শেষ পর্যায়ে হাজিরা মিনায় ফিরে এসে ১১ ও ১২ জিলহজ দিনে তিনটি শয়তানকে (বড়, মধ্যম ও ছোট) ২১টি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর হজের সমাপ্তির অংশ হিসেবে বিদায়ী তাওয়াফ (তাওয়াফুল বিদা) করবেন পবিত্র কাবা শরিফ ঘিরে। এইসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্পন্ন হবে একজন মুসলমানের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত—হজ।
প্রতি বছরের মতো এবারও হজ উপলক্ষে সৌদি সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নির্বিঘ্ন হজ নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী, চিকিৎসা দল, জরুরি উদ্ধারকারী দল ও স্বেচ্ছাসেবক। নানা ধরণের স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যসেবা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে হাজিদের মৃত্যু ঠেকাতে নতুন নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে মক্কা প্রশাসন। অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে স্থানভেদে হাজিদের চলাচল সময় ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এমনকি প্রবেশপথে ডিজিটাল স্ক্যানিং ও নজরদারি ড্রোন ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হচ্ছে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ।
ইসলাম ধর্মমতে, জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত সময়কে হজের আনুষ্ঠানিক সময় ধরা হয়। এই সময়ে হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান, আরাফাতের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা, মুজদালিফায় রাতযাপন, কুরবানি, পাথর নিক্ষেপ, চুল কাটা এবং কাবা শরিফে তাওয়াফসহ সব ধর্মীয় ইবাদত আদায় করেন।
হজ শুধুই একটি ধর্মীয় রিচ্যুয়াল নয়, বরং এটি মুসলমানদের জীবনে আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্বের মহান নিদর্শন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে একই পোশাকে, একই উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া এই বিশাল জমায়েত ইসলামের বিশ্বজনীনতা ও সাম্যের চেতনার অন্যতম প্রতীক। শান্তিপূর্ণ ও সফল হজ সম্পন্নে সকল মুসলমান যেন আল্লাহর কাছে কবুল হন—এ কামনা সবার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ