
ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ৯ জুন চার দিনের একটি মর্যাদাপূর্ণ সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছাবেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে, যা গত বছর থেকে যুক্তরাজ্যের দাতব্য প্রতিষ্ঠান কিংস ফাউন্ডেশন চালু করেছে। এই পুরস্কার বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের তাদের অসাধারণ অবদানের জন্য দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে এই সম্মাননায় ভূষিত হন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। এবার এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গ্রহণ করবেন অধ্যাপক ড. ইউনূস।
সফরকে সরকারি সফর হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার, যার ফলে এটি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সফরের কর্মসূচিতে রয়েছে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক। এই দুই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন অংশীদারত্ব এবং বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়গুলো গভীরভাবে আলোচনা করা হবে।
বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির অন্যতম বড় কারণ। এই অর্থ ফেরত আনার জন্য ঢাকা সরকারের পক্ষ থেকে লন্ডনের কাছে সহায়তা চাওয়া হবে। অর্থ পাচারের বিষয়টি বৈঠকের এক গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক উত্তরণ, রাষ্ট্রীয় সংস্কার কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক সমর্থন অগ্রাধিকার পাবে।
বিবিধ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর যুক্তরাজ্যের সমর্থন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের নৃশংসতার বিচারের গুরুত্ব এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবাধ, স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের সহায়তা বিষয়ে আলোচনা হবে। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচিত।
সফরের দ্বিতীয় দিনে, অর্থাৎ ১২ জুন, ড. ইউনূস বাকিংহাম প্রাসাদে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করবেন। একই দিন বিকেলে সেন্ট জেমস প্রাসাদে রাজা চার্লসের হাত থেকে কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন। এই মুহূর্ত বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
অতিরিক্ত করে, ১১ জুন ড. ইউনূস যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজের আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সংলাপে অংশ নেবেন। এই সংলাপের বিষয়বস্তু ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে গভীর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে এবং বিশ্বমঞ্চে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা হবে।
সরকারি সূত্র জানায়, এই সফর ঘিরে বেশকিছু দিক থেকে আলোচনা এবং প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশেষত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। এই অবস্থায় ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকার কোনও নিশ্চিত তথ্য প্রকাশ করেনি। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময় একটি ‘উইন্ডো’ রাখা হতে পারে যাতে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, যদি তারা উভয়ে তা চান।
চার দিনের এই সফর শেষে ১৩ জুন ঢাকা ফেরার পথে রওনা দেবেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ১৪ জুন সকালে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই সফর বাংলাদেশের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন সহযোগিতায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
সফরের সব কার্যক্রম এবং বৈঠকগুলি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত কূটনৈতিক কৌশলের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন মাত্রা সংযোজন করবে এবং বাংলাদেশে অর্থ পাচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সহায়তা নিশ্চিত করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ