ছবি: সংগৃহীত
ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন আর পারিবারিক উচ্ছ্বাস। তবে কুরবানির ঈদের আনন্দের একটি আলাদা মাত্রা রয়েছে। শুধুমাত্র নামাজ আর দাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না এই ঈদ; বরং হাটে গিয়ে কুরবানির পশু কেনা, তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে যত্ন নেয়া, কোরবানির প্রস্তুতি, এবং মাংস বিতরণের মতো এক বিশাল পারিবারিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এই উৎসব। আর তারকাদের জীবন যতই ব্যস্ততায় মোড়া হোক না কেন, কুরবানির ঈদ তাদের মাঝেও এক গভীর আবেগ ও স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। আজকের বিশেষ আয়োজনে আমরা ফিরে দেখছি আটজন জনপ্রিয় তারকার কুরবানির ঈদ ঘিরে তাঁদের ছোটবেলার সেই দুর্লভ স্মৃতিগুলো—যেখানে মিশে আছে আনন্দ, আবেগ আর দায়িত্ববোধ।
আনন্দ-আত্মজিজ্ঞাসায় অনন্ত জলিল
চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল কুরবানির ঈদ মানেই মনে করেন শৈশবের সেই রঙিন দিনগুলোকে। তাঁর মতে, ঈদের আসল আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় ছোটবেলার অভিজ্ঞতাগুলোতেই। তবে তিনি এটাও বলেন যে এখনকার ঈদগুলোও তার জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। “ছোটবেলায় হাটে গিয়ে গরু দেখা, বাড়ি নিয়ে আসা, সেই গরুকে নিয়ে ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা—এসবই ছিল বিশেষ স্মৃতি। এখন যদিও সময় বদলেছে, তবুও পরিবারের সঙ্গে কুরবানি করার সৌভাগ্য আল্লাহ দিয়েছেন, সেটাই বড় প্রাপ্তি। ঈদের আনন্দ এখন দায়িত্ববোধের মধ্যেই খুঁজে পাই।”
বর্ষার ঈদস্মৃতি ছেলেদের সঙ্গে জড়িয়ে
অভিনেত্রী বর্ষার কাছে ঈদের স্মৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে তাঁর দুই ছেলে। ছোটবেলার ঈদ নিয়ে বলতে গিয়ে বর্ষা জানান, “আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঈদের মুহূর্ত ছিল যখন আমার দুই ছেলে প্রথমবারের মতো তাদের বাবার হাত ধরে ঈদগাহে নামাজ পড়তে গেল। সেই দৃশ্য আমার চোখের সামনে এখনও জ্বলজ্বল করে।” তিনি আরও বলেন, “প্রথম যেদিন ওরা কুরবানির দৃশ্য দেখল, যে উত্তেজনা ওদের চোখে ছিল, তা আজও ভুলিনি। আমি চাই, ওরা যেন সেই স্মৃতি আজীবন মনে রাখে, আর আমি তাদের সে গল্প শুনিয়ে যাই।”
জাহিদ হাসানের শৈশবের ঈদে আতঙ্ক আর আনন্দ একসাথে
অভিনেতা জাহিদ হাসান কুরবানির ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “যখন থেকে বুঝি, তখন থেকেই ঈদের হাটের জন্য অপেক্ষা করতাম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে গরুর হাটে যাওয়া ছিল বিশাল রোমাঞ্চের ব্যাপার। কিন্তু একটা ভয়ও কাজ করত—যদি গরু দড়ি ছিঁড়ে পালায়!” সেই আনন্দ-আতঙ্কের স্মৃতি এখনও চোখে ভাসে তাঁর। তবে বর্তমানে সময়ের অভাবে আগের মতো হাটে যাওয়া হয় না বলে কিছুটা আক্ষেপ রয়েছে তাঁর মধ্যে। “তবুও চেষ্টা করি আমার সন্তানদের নিয়ে হাটে যাই, যেন তাদের ছোটবেলাতেও কিছু সুন্দর স্মৃতি জমা হয়।”
বুবলীর স্মৃতিতে দুই ঈদের দুই অনুভব
শবনম বুবলী মনে করেন, “শৈশবের ঈদ মানেই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কুরবানির ঈদে গরু কেনা, মাংস রান্না, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা—এসব ছিল মধুর স্মৃতি।” এখনকার ঈদগুলো তিনি অন্যভাবে উপভোগ করেন। “বড় হয়ে গেলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। এখন ঈদের আনন্দ খুঁজে পাই পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই। আমার কাছে এখন অন্যকে খুশি রাখাটাই ঈদের মূল আনন্দ।”
সিয়াম আহমেদের পূর্ণতা বাবার হাতে টাকা দেওয়ার মধ্যে
অভিনেতা সিয়াম আহমেদ কুরবানির ঈদ মানেই মনে করেন বাবার সঙ্গে হাটে যাওয়ার সেই শৈশবের স্মৃতিকে। তিনি বলেন, “গরু কেনার পর তার দড়ি ধরে বাড়ি ফেরার যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তখন মনে হতো, ইশ! যদি বাবাকে গরু কেনার টাকা আমি দিতে পারতাম।” সেই শৈশবের ইচ্ছেটা এখন পূরণ হয়েছে তাঁর। “যেদিন থেকে উপার্জন শুরু করেছি, সেদিন থেকেই বাবার হাতে গরু কেনার জন্য টাকা তুলে দেই। সেটা এক অন্যরকম সুখ। কিন্তু ছোটবেলার সেই ঈদের জৌলুস, সেই সরল আনন্দ, সেটা আর পাই না।”
মেহজাবীনের কান্না আর হাসিতে ভরা ঈদস্মৃতি
অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর কাছে কুরবানির ঈদ মানেই গরু-ছাগল আনার পর বাসায় তৈরি হওয়া উৎসব। তবে তাঁর স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল একটি মজার ঘটনা। “একবার হাটে যাওয়ার খুব শখ হলো। কিন্তু ভাইয়েরা আমাকে নিতে রাজি হলো না। আমি চুপিচুপি পিছু নিয়েছিলাম। ভিড়ের মধ্যে তাদের হারিয়ে ফেলে হাটে বসে কান্না শুরু করলাম। পরে ভাইয়েরা আমাকে খুঁজে পেয়ে বাড়ি নিয়ে আসে।” এখন তিনি হাসিমুখে বলেন, “ওই স্মৃতি আজও চোখের সামনে ভাসে। একা একা হেসে ফেলি।”
আজমেরী হক বাঁধনের দুই ঈদ, দুই বাড়ি, দুই আনন্দ
অভিনেত্রী বাঁধনের কুরবানির ঈদ মানেই দাদাবাড়ি। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় রোজার ঈদ হতো নানাবাড়িতে, কুরবানির ঈদ দাদাবাড়িতে। সেই সময়ে আত্মীয়দের সঙ্গে মিলে যে আনন্দ পেতাম, সেটা আজকাল আর পাওয়া যায় না।” তাঁর স্মৃতিতে বাড়িতে গরু এলে শুরু হতো ব্যস্ততা ও উচ্ছ্বাস। “ভাইবোনেরা সারাদিন গরু নিয়েই থাকতাম। এখন ঈদ মানে দায়িত্ব পালন, বড়দের ভূমিকায় থাকা। কিন্তু শৈশবের আনন্দ এখনও বুকের ভেতর কাঁপিয়ে যায়।”
ইমরান মাহমুদুলের ‘নব্বই দশকের ঈদ’ স্মৃতি
গায়ক ইমরান মাহমুদুল মনে করেন, নব্বইয়ের দশকে ছেলেবেলা কাটানো মানুষরাই সবচেয়ে সৌভাগ্যবান। “কুরবানির ঈদে গরু কেনা, হাটে যাওয়া, বাসায় এনে যত্ন নেয়া—এই প্রক্রিয়াগুলোই ছিল ঈদের মূল আনন্দ।” এখনকার ঈদ নিয়ে তিনি বলেন, “সবকিছু যেন এক যান্ত্রিক ব্যস্ততায় মোড়ানো। সেই জাদুটা আর নেই। এখন চেষ্টা করি দায়িত্ব পালন করে সবাইকে খুশি রাখতে, তাতেই কিছুটা তৃপ্তি পাই।”
এইসব তারকার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় একই বার্তা—কুরবানির ঈদ মানেই শৈশবের সরল আনন্দ, পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা এবং আজকের দিনে এসে সেই আনন্দের জায়গায় এসেছে দায়িত্ব ও আত্মনিবেদন। হয়তো এখন আর গরু আনার পর শিশুর মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ হয় না, হয়তো হাটে যাওয়ার সময় নেই, কিন্তু ঈদের মূল সৌন্দর্য—পরিবারের জন্য ভালো কিছু করা, কারও মুখে হাসি ফোটানো, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা—এগুলো আজও সবাই ধারণ করেন হৃদয়ে। আর তাই, যতই সময় বদলাক, কুরবানির ঈদ তার আপন ঐতিহ্য আর আবেগ নিয়ে প্রতিবার ফিরে আসে তারকাদের জীবনেও।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



