
ছবি: সংগৃহীত
আইপিএল ২০২৫-এর ফাইনালে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন বেঙ্গালুরু দল আবারো ইতিহাস রচনা করলো। দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রতীক্ষার পর অবশেষে কোহলির বেঙ্গালুরু আবারো আইপিএল শিরোপা জয়ের আনন্দ উপভোগ করল। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত এই মূহুর্তে ভক্ত, খেলোয়াড় ও বিশেষ করে বিরাট কোহলির পরিবারের জন্য ছিল অতন্দ্র প্রহর। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে যখন বিরাট কোহলি বাউন্ডারি এড়াতে গিয়ে মুখ ঢেকে নেন, তখন ক্যামেরা ঘুরে যায় গ্যালারিতে বসা তার স্ত্রী আনুশকা শর্মার দিকে, যিনি মাথায় হাত দিয়ে এই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তটি উপভোগ করছিলেন। কোহলির চোখে- মুখে প্রকাশ পায় অবিশ্বাস আর অনির্বচনীয় আনন্দ, যা বোঝায় দীর্ঘদিন ধরে তীব্র আকাঙ্ক্ষার ফলস্বরূপ পাওয়া সাফল্যের মুহূর্ত।
ফাইনালের শেষ দিকে, পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর জন্য রুটিন বলগুলো যথাযথভাবে খেলার মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হলো জয়। পরবর্তী চার বলে তিনটি ছক্কা আর একটি চারের মুঠোফোনীয় আঘাত তেড়ে সেই জয় নিশ্চিত করলেন বিরাট কোহলিরা। ৬ রানের এই জয়ই ইতিহাসের পাতায় বেঙ্গালুরুর নাম একবার আবারো উচ্চারিত করলো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হিসেবে।
পাঞ্জাব কিংসের জন্য ফাইনালে হারের অভিজ্ঞতা নতুন নয়। ২০১৪ সালের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ছিল তাদের হার। এর পর আরও দু’বার আইপিএলের ফাইনালে তারা ছুটে গিয়েছে, কিন্তু সফলতা ছিল তাদের কাছ থেকে দূরে। এমনকি বিলুপ্ত হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টুর্নামেন্টের ফাইনালেও তারা হার পেয়েছিল, যার ফলে মোট চারবারের ফাইনাল হারে পাঞ্জাবের মাথায় রয়েছে হতাশার গভীর ছায়া।
তবে এই সব ফাইনালে থাকা ও হারার অভিজ্ঞতা পাঞ্জাবের জন্য বিশেষ একজন খেলোয়াড়ের কাছে একাকী বহন করতে হয়েছে, তিনি হলেন বিরাট কোহলি। ২০০৮ সালের আইপিএলের প্রথম আসর থেকে বেঙ্গালুরু দলের সদস্য কোহলি কখনও দল পরিবর্তন করেননি। সময়ের স্রোতে যেসব মহারথী খেলোয়াড় দল বদল করেছে, কোহলি একই দলেই থেকেছেন এবং সব ফাইনাল ম্যাচ খেলেছেন।
বেঙ্গালুরু দলের প্রথম ইনিংস ১৯০ রানে শেষ হয়। দলকে এই রান এনে দেওয়ার পেছনে বিরাট কোহলির অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি, ৪৫ রানের ইনিংস। যদিও তার ইনিংস ছিল মন্থর বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, ৩৫ বল খেলে এই রান করা আধুনিক টি-টোয়েন্টির জন্য কিছুটা ধীর। তবে দলে অন্যরাও যথেষ্ট দ্রুত রান করেছেন। বিশেষ করে ১০ বলে ২৪ রান করে জিতেশ শর্মার ইনিংস দলের জন্য রূপ রেখেছিল ২০০ রানের দিকে।
এর পর রোমারিও শেফার্ডের ৯ বলের ১৭ রানের ঝড়ো ইনিংস বেঙ্গালুরুর রানের ভাণ্ডারকে আরও বাড়াতে সাহায্য করেছিল। তবে শেষ দিকে কাইল জেমিসনের ধারাবাহিক বোলিং পাঞ্জাবের জন্য বড় ঝামেলার কারণ ছিল। তিনি শেষ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে বেঙ্গালুরুকে ১৯০ রানে আটকে দিলেন।
পাঞ্জাবের ব্যাটিং শুরু হয় দৃঢ়তা ও শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে। ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ও প্রাভসিমরান সিং নিয়মিত বাউন্ডারি না মারলেও প্রয়োজনীয় রান এনে দিচ্ছিলেন। কিন্তু তারা উভয়েই বেশ নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং করছিলেন, যার কারণে প্রয়োজনীয় রান গতি তেমন ছিল না। ওপেনারদের বিদায়ের পর অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার ১ রানে আউট হলে পাঞ্জাবের সমস্যা আরও জটিল হয়। ইনিংসের মাঝপথে ৩ উইকেটে ৭৯ রান, যখন ১১২ রান প্রয়োজন ছিল বাকি ৬২ বলে।
জশ ইংলিসের ২৩ বলে ৩৯ রানের ইনিংস কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও, তার আউটের পর পাঞ্জাবের ওপর চাপ বেড়ে গেল। ক্রুনাল পান্ডিয়ার বোলিংয়ে প্রাভসিমরান সিং ও ইংলিস দুজনেই সাজঘর ফিরলে দল বিপর্যস্ত হয়। নেহাল ওয়াধেরার ১৮ বলে ১৫ রানের ইনিংস হতাশা কমাতে পারেনি। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শশাঙ্ক সিং-এর একক লড়াই ভীষণভাবে অপর্যাপ্ত ছিল।
শেষ ওভারে পাঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান, কিন্তু শুরু থেকেই দুটি ডট বল দের কারণে বিপর্যয়ে পড়ল। শেষ চার বলেই জশ হেইজেলউড ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাতে ৬,৪,৬,৬ রান খেয়ে বেঙ্গালুরুর জয় নিশ্চিত করে দিলেন। ৬ রানের এই ব্যবধানের মধ্যেই কোহলির ১৮ বছরের প্রতীক্ষার পর শিরোপা হাসি ফুটালো।
বিরাট কোহলির এই জয়ের মঞ্চে উঠে আসা সংগ্রামের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। একদিকে কোহলি নিজে ১৮ বছর ধরে আইপিএলের ফাইনালে খেলে এসেছেন, অন্যদিকে বেঙ্গালুরুর দল হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে শিরোপার অপেক্ষায় থেকেছেন। এই জয় শুধু একটি টুর্নামেন্টের শিরোপা নয়, বরং এক যাত্রার সার্থকতা, দীর্ঘ অপেক্ষার সুমধুর প্রতিফলন।
আইপিএল ২০২৫-এর ফাইনালে কোহলির বেঙ্গালুরুর উত্থান, পাঞ্জাব কিংসের দীর্ঘদিনের হতাশাকে নতুন করে উপলব্ধি করিয়েছে। এই জয়ের আনন্দ ভক্ত, খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মন জুড়ে রইল অনেক দিন। আর বিরাট কোহলির চোখে-মুখে সেরকম আনন্দের ছাপ, যা ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল ধরে থাকবে। ১৮ বছরের অপেক্ষা শেষে বেঙ্গালুরুর জয় প্রমাণ করলো, ধৈর্য্য, সংগ্রাম আর দলের ঐক্যই শেষ পর্যন্ত সাফল্যের চাবিকাঠি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ