
ছবি: সংগৃহীত
নাটকপ্রেমীদের কাছে তানজিন তিশা মানেই এক ধরনের স্নিগ্ধতা, অভিনয়ে সাবলীলতা ও চরিত্র রূপায়ণে অভিনবতা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন নাটকে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আসা এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী বর্তমানে কিছুটা আড়ালে থাকলেও তার প্রতিটি নতুন কাজ যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তার উপস্থিতি নাটকে কমলেও ওটিটি কনটেন্টে তিনি নিজেকে নতুনভাবে তুলে ধরছেন এবং সেই পরিসরেই এখন আলোচনার কেন্দ্রে তানজিন তিশা। তবে আলোচনার পাশাপাশি একটি অপ্রত্যাশিত চাপের মধ্যেও রয়েছেন তিনি—যার সূত্রপাত তার অভিনীত নতুন ওয়েব ফিল্ম ‘হাইড এন সিক’ থেকে।
ওটিটি কনটেন্টে তিশার যাত্রা শুরু হয় বেশ কিছুদিন আগে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ঘুমপরী’ নামক ওয়েব ফিল্মে তার অভিনয় দর্শকমনে বিশেষ জায়গা করে নেয়। মানসিক সংকট আর স্বপ্নের ভেতর ডুবে থাকা এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করেন যে, চ্যালেঞ্জিং চরিত্রেও তিনি সাবলীল। এই কাজটির জন্য সম্প্রতি তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও লাভ করেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিশা বলেন, ‘এটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি কাজ। দীর্ঘদিন আগে এটি প্রচার হলেও, এখনও সে চরিত্রের ঘোরের মধ্যেই রয়েছি।’
এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট—তিশা এখন আর আগের মতো একের পর এক কাজ করছেন না। বরং তিনি নিজের কাজের মান, গল্প এবং চরিত্রের বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। জনপ্রিয়তার চাপে না পড়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলছেন একজন কনটেন্ট-সেনসিটিভ শিল্পী হিসেবে।
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও একটি ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিশা। নাম ‘হাইড এন সিক’। এটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমি, যিনি আগে থেকেই থ্রিলার ঘরানার কাজের জন্য পরিচিত। ওয়েব ফিল্মটিতে তানজিন তিশা অভিনয় করেছেন নাদিয়া নামের এক বিনোদন সাংবাদিকের চরিত্রে। এই চরিত্রটি শুধুমাত্র একটি নিউজ রিপোর্টারের নয়, বরং একটি অনুসন্ধানী মানসিকতা, সাহস, ও আতঙ্কের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
গল্পের পটভূমি চমকপ্রদ: একজন জনপ্রিয় ফিল্মস্টারের বিয়ের দিন রহস্যজনকভাবে আহত হয় রাশা নামের এক তরুণী। মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং সে অভিনেতার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। সংবাদকর্মী নাদিয়া যখন এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন, তখন ঘটতে থাকে একের পর এক বিপত্তি। হুমকি দেওয়া হয়, সাংবাদিককে হত্যা করা হতে পারে এমন ঘটনাও ঘটে। অন্যদিকে রাশাও বেঁচে যায় মৃত্যুর মুখ থেকে। কে বা কারা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে? কে আসল অপরাধী? এই রহস্য উন্মোচনের মধ্যেই গড়ায় গল্প।
তিশা বলেন, ‘এটির গল্পে পরতে পরতে রয়েছে টুইস্ট, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করবে। শেষ দৃশ্য না দেখা পর্যন্ত দর্শক উঠতে পারবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।’
তিশা জানিয়েছেন, তিনি এখন আর আগের মতো গড়পড়তা কাজ করছেন না। বরং মানসম্মত ও ভিন্নধর্মী কনটেন্টের দিকেই মনোযোগী। তার ভাষায়, ‘গড়পরতা অনেক কাজ করার চাইতে ভালো কাজ করা উচিত। যেগুলোতে নতুনত্ব থাকবে। ভালো গল্প ও চরিত্র পেতে একটু সময় তো লাগবেই। সেই সময়টাই আমি নিচ্ছি। তাই এখন কাজের পরিমান কম। তবে কাজ করছি। একেবারেই বসে নেই।’
এই মনোভাবই তাকে বানিয়েছে একজন পরিপক্ক অভিনয়শিল্পী। এখন তিনি অভিনয় করছেন বেছে বেছে, যাতে প্রতিটি চরিত্রেই নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারেন।
পরিচালক মাহমুদুর রহমান হিমি বলেন, ‘থ্রিলারধর্মী এ গল্পে এমন একটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যা আমাদের সমাজে ঘটলেও থাকে অপ্রকাশিত। কিন্তু আমরা এখন এই ট্যাবু ভাঙতে চাই।’ তার মতে, বিনোদনের পাশাপাশি ওয়েব ফিল্মটি সমাজের নিরব সত্যগুলোকে সামনে আনবে, যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা জরুরি।
‘হাইড এন সিক’ ওয়েব ফিল্মটি প্রচার হবে দীপ্ত প্লে নামক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসন্ন ঈদে। এছাড়াও কুরবানির ঈদ উপলক্ষে তানজিন তিশা অভিনয় করেছেন একাধিক নাটকে। তিনি জানান, ‘ঈদের জন্য আমি আগে থেকে পরিকল্পনা করে কাজ করি। যেটা গত ঈদে হয়নি। কুরবানির ঈদের জন্য বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করেছি। মানের দিক দিয়ে আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে বলেই সে কাজগুলোতে যুক্ত হয়েছি।’
নাটক ও ওয়েব কনটেন্টে নিয়মিত কাজ করলেও, তানজিন তিশা এখনো পর্যন্ত সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষিক্ত হননি। যদিও তার অনুরাগীরা বহুদিন ধরেই তাকে সিনেমায় দেখার অপেক্ষায় আছেন। কবে সেই দিন আসবে—তা এখনো অজানা।
তানজিন তিশা এখন এমন এক পথে হাঁটছেন যেখানে জনপ্রিয়তা নয়, বরং শিল্পমানকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। একটি ওয়েব ফিল্মের চরিত্র তাকে যেমন পুরস্কৃত করেছে, আরেকটি ফিল্মের চরিত্র তাকে ঠেলে দিচ্ছে অজানা হুমকির ভেতর। বাস্তব জীবনে তিনি হয়তো বিপাকে পড়েননি, তবে পর্দার চরিত্রে সেই বিপাকই যেন নতুন তানজিন তিশাকে হাজির করছে দর্শকদের সামনে। চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে তার এই পুনর্জন্ম নিঃসন্দেহে বাংলা বিনোদন জগতের জন্য এক ইতিবাচক বার্তা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ