ছবি: সংগৃহীত
দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের আকাশপথে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছে সরকার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক শিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক জরুরি বা ডাইভারশন ফ্লাইটের জন্যও এই বিমানবন্দর ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সিভিল এভিয়েশন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শাকিলা পারভিন স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনাটি ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক শিডিউল ফ্লাইট চলাচল স্থগিত থাকবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক নন-শিডিউল ফ্লাইট এবং ইমার্জেন্সি বা ডাইভারশন ফ্লাইটের জন্য বিমানবন্দরটি ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
এ নির্দেশনার আলোকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, যাতে সিদ্ধান্তটি যথাযথভাবে কার্যকর করা যায়।
এর আগে চলতি বছরের ২ অক্টোবর মন্ত্রণালয় দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছিল। পরে ১২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানবন্দরটিকে ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তবে ঘোষণার মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে, ২৬ অক্টোবর আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে সরকার। এখন ২৭ অক্টোবরের নতুন অফিস আদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ও জরুরি অবতরণের অনুমতিও স্থগিত করা হলো।
যদিও স্থগিতাদেশের আনুষ্ঠানিক কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে—বিমানবন্দরের অবকাঠামো, যাত্রী টার্মিনাল, রানওয়ে সম্প্রসারণ, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা, এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ডের বেশ কিছু বিষয় এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। ফলে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করা এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করছে সরকার।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে রূপ দিতে কিছু যান্ত্রিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উন্নয়নকাজ চলমান আছে। এসব কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে তা নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মান উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার উদ্যোগটি মূলত সরকারের বৃহৎ পর্যটন উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এই বিমানবন্দর থেকে ভবিষ্যতে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতের কলকাতা বা চেন্নাইয়ের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা বিবেচনা করা হচ্ছিল।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এই বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে পর্যটন ব্যবসা নতুন গতি পেত। তবে আমরা বুঝতে পারছি সরকার অবকাঠামোগত প্রস্তুতি নিশ্চিত করেই এগোতে চায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক।”
বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণ, আধুনিক টার্মিনাল ভবন, রাডার সিস্টেম, ফায়ার সার্ভিস সুবিধা, এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনালের কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ইউনিট নির্মাণের কাজ বর্তমানে চলমান। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এটি দেশের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, নন-শিডিউল ফ্লাইট ও জরুরি অবতরণ স্থগিত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ হলেই পুনরায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



