
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বেসরকারি বিমান পরিবহন খাতে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় প্রশস্তবডির (ওয়াইড-বডি) এয়ারক্রাফট এয়ারবাস এ-৩৩০-৩০০, যার মাধ্যমে মোট বিমানসংখ্যা দাঁড়ালো ২৫-এ। এর মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বিমানবহর হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করল প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে স্পেনের ট্যুরেল শহর থেকে ছেড়ে আসা নতুন এয়ারবাসটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের পরই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এয়ারক্রাফটটি গ্রহণ করেন। উপস্থিত ছিলেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকবৃন্দ, পাইলট ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা, পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।
নতুন যুক্ত হওয়া এয়ারবাস এ-৩৩০-৩০০-এ রয়েছে ৪৩৬ আসনের সুবিশাল ধারণক্ষমতা। এই বিমানটি ইউএস-বাংলার ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় রুট—সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও মদিনায়—নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যবহৃত হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, হজযাত্রী ও কর্মজীবী বাংলাদেশিদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এই রুটগুলোতে বড় আকারের বিমান যুক্ত করা সময়ের দাবি ছিল।
বর্তমানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বহরে রয়েছে তিনটি প্রশস্তবডির এয়ারবাস এ-৩৩০-৩০০, নয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, এবং দশটি এটিআর ৭২-৬০০ বিমান। মোট ২৫টি বিমানের এই শক্তিশালী বহর নিয়ে ইউএস-বাংলা এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক এয়ারক্রাফট পরিচালনাকারী বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিদিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও সাজেক পর্যন্ত নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা, চেন্নাই, মালে, মাস্কাট, দোহা, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি, জেদ্দা, রিয়াদ, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর ও চীনের গুয়াংজু রুট।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সব সময় যাত্রীদের সর্বোচ্চ আরাম, নিরাপত্তা ও সময়নিষ্ঠ সেবা প্রদান। তৃতীয় এয়ারবাস এ-৩৩০ যুক্ত হওয়ায় ইউএস-বাংলা আরও বৃহৎ আকারে আন্তর্জাতিক আকাশপথে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করতে পারবে। বিশেষ করে সৌদি আরবের ধর্মীয় নগরীগুলোতে যাত্রী পরিবহনে আমরা নতুন মাত্রা যোগ করব।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের লক্ষ্য ইউরোপ ও দূরপ্রাচ্যের নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করা। এজন্য আরও কিছু বৃহদাকার বিমান কেনার প্রক্রিয়াও চলছে।
বাংলাদেশের বিমান পরিবহন ইতিহাসে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে এক শক্তিশালী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে মাত্র দুটি বিমানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা এ সংস্থা বর্তমানে দেশের ভেতরে ও বাইরে শতাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, নিয়মিত ফ্লাইট সময়সূচি এবং আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা বজায় রেখে তারা দেশের বিমান শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে চায়।
ইউএস-বাংলার এই ধারাবাহিক সম্প্রসারণ বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান খাতের সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহনে দেশীয় সংস্থার উপস্থিতি জোরদার হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই থাকবে বলে মনে করছেন বিমান বিশেষজ্ঞরা।
নতুন এয়ারবাস যুক্ত হওয়ায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, সেবার মান ও পরিধির দিক থেকেও এখন দেশের আকাশপথে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ