ছবি: সংগৃহীত
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ১,০৪১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বাইরে কোনো বিভাগে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৪,৬৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ২,৭৬১ জন ভর্তি আছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে, আর বাকি ১,৮৭৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর বাইরে।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৬২ হাজার ৩৩১ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১,৮৩২ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে অগভীর জলাশয়, গৃহস্থালি পানি সংরক্ষণ পাত্র এবং নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ ও নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত সময়টিই ডেঙ্গু সংক্রমণের শীর্ষ মৌসুম। তাই আগামী কয়েক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দেশের সব হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ড ও শয্যা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন হওয়াই এখন সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, গায়ে ব্যথা বা র্যাশ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন কিংবা ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশেষ করে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়। গত বছরের তুলনায় এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
ডেঙ্গুর এই বাড়তি সংক্রমণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতনতা বৃদ্ধি ও মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



