ছবি: সংগৃহীত
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে তাদের দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ফ্লাইটটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকায় আসবেন বলে নির্ধারিত ছিল। সরিয়ে নেওয়া হওয়া দুই কর্মী হলেন জুনিয়র পার্সার মো. সওগাতুল আলম সওগাত এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডস জিনিয়া ইসলাম। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারেক রহমানের লন্ডন থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের সময়সূচী ধরা হয়েছে আগামী ২৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার।
এ ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে কর্মীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন। কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, এই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র থাকার তথ্য সামনে আসায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ সেলিম সহ অন্যান্য নেতাকর্মীর অসংখ্য ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরই তাদের বিষয়ে সতর্কতা বাড়ে। উল্লেখ্য, এই দুইজন নিয়মিতভাবে শেখ সেলিমের ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে থাকতেন বলে জানা গেছে।
বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে শুধু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাই নয়, বরং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টিও উল্লেখ ছিল। এ কারণেই ফ্লাইটের নিরাপত্তা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে প্রাক-নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে তাদেরকে সেই নির্দিষ্ট ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবর্তে ফ্লাইট পার্সার মোস্তফা এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আয়াতকে দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়েছে বলে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ নিশ্চিত করেছে।
তারেক রহমানকে বহন করার কথা থাকা বিজি–২০২ ফ্লাইটটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। এই ফ্লাইটটিতে তারেক রহমানের পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির আরও কিছু শীর্ষ নেতাও উপস্থিত থাকবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। ফলে ফ্লাইটের সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিশেষ সতর্কতা ও প্রস্তুতিকে এই সিদ্ধান্তের পিছনে একটি প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
এটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ইতিহাসে প্রথমবার নয় যে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ফ্লাইট থেকে কর্মী সরানো হলো। এর আগে, গত ২ মে একই রকম প্রেক্ষাপটে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইট থেকেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আল কুবরুন নাহার কসমিক এবং মো. কামরুল ইসলাম রিপন নামের দুই কেবিন ক্রুকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনায়ও কর্মীদের রাজনৈতিক সংযোগ বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল। ফলে, দেখা যাচ্ছে যে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ফ্লাইটগুলোর ক্ষেত্রে গোয়েন্দা নিরাপত্তা স্ক্রিনিং এবং পূর্ববর্তী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়মিত অনুসরণ করা হতে পারে।
বিমান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তকে "রুটিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা" হিসাবে ব্যাখ্যা করা হলেও, রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং জনমনে এটি নিয়ে নানান প্রশ্ন ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে, কর্মীদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ বা যোগাযোগ পেশাদার দায়িত্বে প্রভাব ফেলছে কিনা – তা একটি বড় বিবেচনার বিষয়। আবার অন্য দিকে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও মত রয়েছে।
এই ঘটনায় উঠে আসে বিমান কর্তৃপক্ষ, নিরাপত্তা এজেন্সি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যকার জটিল সম্পর্কের একটি চিত্র। কোনও কর্মীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্রিয়াকলাপ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও রাজনৈতিক প্রতীকী প্রকাশ কীভাবে তার পেশাদার দায়িত্ব ও নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নিয়মিত মূল্যায়নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যখন সেই কর্মী রাষ্ট্রীয় বা উচ্চ-প্রোফাইল যাত্রীসেবার সাথে যুক্ত থাকেন।
উদ্বেগের আরেকটি দিক হলো কর্মীদের উপর এই সিদ্ধান্তের প্রভাব। সরিয়ে নেওয়া হওয়া কর্মীদের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব, তাদের কার্যক্রম তদন্ত এবং পুনর্বহালের সম্ভাবনা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। বিমান কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুযায়ী, এ ধরনের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও প্রোটোকল অনুসরণ করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে, এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা রক্ষার চ্যালেঞ্জকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। ফ্লাইটের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের এই ধরনের পদক্ষেপকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা হিসাবে দেখা হলেও, এটি একটি বৃহত্তর বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে – ব্যক্তির রাজনৈতিক বিশ্বাস ও সংযোগ পেশাগত সুযোগকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের সীমারেখা কোথায়। তারেক রহমানের ফ্লাইটটি নিরাপদে ও নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় পৌঁছালে এ সংক্রান্ত সকল জল্পনার অবসান হতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ফ্লাইটগুলোর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগামীতেও জারি থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



