ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি অ্যাপ ব্যবহার করবে। এর মাধ্যমে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সহিংসতা ও হামলার মতো ঘটনার তথ্য, ছবি, ভিডিওসহ অন্যান্য বর্ণনা তাৎক্ষণিকভাবে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারবে। সেই অনুযায়ী কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার নির্দেশনাও অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া যাবে। অ্যাপটি ব্যবহার করবেন ইসি, নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ভোটেও এই অ্যাপ ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে অ্যাপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে ইসি সূত্র জানায়।
ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা করার মতো আরও ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের তৎপরতার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টেলিগ্রাম’ অ্যাপও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই এই ধরনের কার্যক্রম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সহিংসপ্রবণ ভোটকেন্দ্র, প্রভাবশালী ব্যক্তি, সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর তথ্য পৃথকভাবে সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পাশাপাশি পুলিশও এ বিষয়ে কাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার পর বড় ধরনের অঘটন এখনও ঘটেনি, যা সম্ভব হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের শঙ্কা থাকে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দিয়েছি।’ ভোটে অ্যাপ ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতি সম্পর্কে দ্রুত তথ্য পাওয়া এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য এই অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর। প্রার্থী চূড়ান্ত হবে ২০ জানুয়ারি। আর নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে ২১ জানুয়ারি থেকে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হবে। নির্বিঘ্ন ভোটগ্রহণ করার লক্ষ্যে পাঁচ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো বিশেষভাবে মোতায়েন থাকবে।
ইসি সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং দেশের মানুষকে ভোটমুখী করার অংশ হিসেবে ইসি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ জোর দিচ্ছে। গত সোম ও বৃহস্পতিবার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে সারা দেশের নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন।বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ এবং ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’-তে আনা সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন পরিবেশ ও পরিস্থিতি উন্নত করা যায়। এছাড়া নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা পরিপত্র ও চিঠি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এ নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস নিয়ে মানুষের মধ্যে আবেগ, উদ্যম কাজ করে। এ দিবসটি পালন হয়ে গেছে। এখন আচরণবিধির প্রয়োগ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইসি। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আইনের প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে।’ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো অ্যাকশনে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং অ্যাপ
ভোটগ্রহণের সময় ৭২ ঘণ্টার জন্য ব্যবহার করা হবে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং অ্যাপ। নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় তৈরি এই অ্যাপে দেশের তিনশ আসনের মানচিত্র চিহ্নিত থাকবে। অ্যাপে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ইসির কর্মকর্তারা লগইন করে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা অ্যাপের মাধ্যমে ঘটনার ছবি, ভিডিও, তথ্য বা ভয়েস রেকর্ড তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আসনভিত্তিক মনিটরিং সেলের কাছে পাঠাতে পারবেন। তারা প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবেন। যদি তারা পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তথ্যটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাবে এবং তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যর্থ হলে তথ্য সরাসরি ইসির কাছে যাবে, যারা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র বা আসনের ভোটগ্রহণ বন্ধসহ অন্যান্য যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
আরও জানা যায়, এই অ্যাপের কেন্দ্রীয় অ্যাডমিন হবে ইসির মনোনীত কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল। ইসি সারা দেশের ভোটগ্রহণের সময় সব ঘটনার বর্ণনা ও পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পারবে। তবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ আওতাধীন এলাকার তথ্য জানাতে পারবেন। অন্য এলাকার তথ্যও জানতে বা দেখতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি রয়েছে। ভোটগ্রহণ সামনে রেখে ৮২ সদস্যের একটি মনিটরিং সেল গঠন প্রক্রিয়াধীন আছে। ওই সেলে সব বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। অ্যাপে আসা তথ্য অনুযায়ী নিজ নিজ বাহিনীকে নির্দেশনা দিতে পারবেন মনিটরিং সেলের সদস্যরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



