ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া আবারও আলোচনায় এসেছেন তার ব্যক্তিগত জীবনের কারণে। সম্প্রতি তৃতীয়বারের মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ তাকে অভিনন্দন জানালেও অনেকেই কটাক্ষ ও নেতিবাচক মন্তব্য করতে ছাড়েননি। তবে এই বিতর্কের মাঝেই ফারিয়া নিজের অবস্থান ও অনুভূতির কথা খোলাখুলি প্রকাশ করেছেন সামাজিক মাধ্যমে, যা আবারও তাকে আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।
২৫ অক্টোবর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছেন—‘কেউই বিয়ে করে এই ভেবে নয় যে, একদিন এই সম্পর্কটা ভেঙে যাবে। আমরা সবাই ভালোবাসা, ধৈর্য আর আশা নিয়ে সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। সম্পর্কটা যেন টিকে থাকে, তার জন্য মন থেকে চেষ্টা করি। আমরা যতই শিক্ষিত, সফল বা শক্তিশালী হই না কেন—প্রত্যেক মানুষের মন চায় সম্পর্কটা আঁকড়ে ধরে রাখতে, যদি না সেখানে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা থাকে।’
ফারিয়া আরও বলেন, অনেকেই একাধিকবার বিয়ের বিষয়টিকে লজ্জাজনক মনে করেন বা অন্যদের সমালোচনার সুযোগ খোঁজেন। কিন্তু তার মতে, বহুবার বিয়ে করা মানে ব্যর্থতা নয়, বরং নতুন করে শুরু করার সাহস।
তিনি বলেন, ‘যারা একাধিকবার বিয়ে করেছেন, তারা তাদের অতীত নিয়ে কখনো গর্ব করেন না। বরং একটা সম্পর্ক ভাঙার পর নতুন করে ভালোবাসা, বিশ্বাস আর আস্থা রাখাটা বিশাল সাহসের ব্যাপার। নতুন করে শুরু করতে শক্তি লাগে, লজ্জা নয়। অনেকেই ভেবে নেয় যে একাধিকবার বিয়ে করা মানে স্থির হতে না পারা, কিন্তু বাস্তবতা হলো, নতুন করে বিশ্বাস করতে পারা মানেই নিজের প্রতি ও জীবনের প্রতি এক অসাধারণ আস্থা।’
শবনম ফারিয়া তার পোস্টে সমাজের সমালোচনামূলক মানসিকতার দিকেও আলোকপাত করেন। তিনি অনুরাগীদের উদ্দেশে লেখেন, ‘দয়া করে কাউকে বিচার করবেন না, গুজব ছড়াবেন না, কটু কথা বলবেন না।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘আপনি জানেন না একজন মানুষ হাসিমুখে উঠতে কত কঠিন লড়াই করেছেন। প্রতিটি মানুষ তার নিজের জীবনে এমন কিছু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যায়, যা বাইরের কেউ বুঝতে পারে না। তাই অন্যের জীবন নিয়ে মন্তব্য করার আগে একটু সহানুভূতিশীল হোন।’
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘জীবনের অনিশ্চয়তা আমাদের প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয়—আগামীকাল কী অপেক্ষা করছে, তা কেউ জানে না। তাই কথায় হোন কোমল, আচরণে রাখুন দয়া। জীবন কাউকেই ছাড় দেয় না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা প্রায়ই ভাবি, অন্যের জীবন সহজ, কিন্তু বাস্তবে প্রত্যেকেই নিজের মতো করে লড়াই করছে। কখনো সেটা সম্পর্কের, কখনো নিজের মানসিক শান্তির জন্য।’
নতুন করে বিয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ফারিয়া বলেন, ‘নতুন সম্পর্ক মানে নতুন করে বিশ্বাস, ভালোবাসা আর সাহস নিয়ে পথচলা। এটা কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং জীবনের প্রতি নতুন করে আস্থা রাখার প্রকাশ।’
তিনি মনে করেন, জীবনে যদি আগের সম্পর্ক ভেঙেও যায়, তার মানে এই নয় যে মানুষ ভালোবাসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। বরং যে ব্যক্তি আবারও ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখে, সে আসলে জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে।
ফারিয়া আরও বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই আমাদের কিছু না কিছু শেখায়। আমার আগের অভিজ্ঞতাগুলো হয়তো আমাকে আরও পরিণত করেছে, আরও শক্ত করেছে। তাই এবার আমি নতুন করে পথচলা শুরু করেছি, অনেকটা শান্ত মন নিয়ে।’
ফারিয়ার পোস্টটি প্রকাশের পর মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক অনুরাগী তার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করেন—‘আপনি সত্যিই সাহসী’, ‘মানুষের জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার নিজের’, ‘সমালোচনার চেয়ে শ্রদ্ধাই প্রাপ্য’।
তবে কেউ কেউ এখনো প্রশ্ন তুলেছেন, একজন জনপ্রিয় তারকা হিসেবে বারবার বিয়ের বার্তা তরুণ সমাজে কী প্রভাব ফেলবে। কিন্তু ফারিয়ার ভক্তরা বলছেন, তিনি যা বলেছেন, তা অনেক নারীর মনের কথা—যারা সামাজিক চাপে নিজের সুখের সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান।
শবনম ফারিয়া বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক, টেলিফিল্ম ও ওয়েব কনটেন্টের পরিচিত মুখ। অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা ও মডেলিংয়েও রেখেছেন সমান পদচিহ্ন। তার অভিনয়জীবন যেমন আলোচিত, তেমনি ব্যক্তিজীবনও বহুবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
প্রথম বিবাহের পর বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিয়েও স্থায়ী না হওয়ায় তিনি কিছুদিন অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। এখন তৃতীয়বারের মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি আবারও আলোচনায়। তবে এইবারের প্রতিক্রিয়ায় তিনি যেন নিজের জীবনদর্শন প্রকাশ করলেন—যে জীবনে ব্যর্থতা নয়, নতুন করে শুরু করার সাহসই আসল শক্তি।
তার পোস্টের শেষাংশে শবনম ফারিয়া লেখেন, ‘আমরা সবাই মানুষ, ভুল করি, শিখি, আবার এগিয়ে যাই। তাই অন্যের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসাহাসি নয়, বরং একটু সহানুভূতি দেখান। কারণ আজ যে অবস্থায় আমি আছি, কাল সেখানে হয়তো আপনিও থাকতে পারেন।’
ফারিয়ার এই বার্তা এখন শুধু তার অনুরাগীদের নয়, বরং সমাজের সকল নারীর কাছেও এক প্রেরণা হয়ে উঠেছে—যারা ব্যর্থতার ভয়ে নতুন করে শুরু করতে ভয় পান। কারণ, নতুন করে ভালোবাসতে পারা কখনোই লজ্জার নয়, বরং সেটাই জীবনের প্রতি বিশ্বাসের সবচেয়ে সুন্দর প্রকাশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



