
ছবি: সংগৃহীত
ঢালিউডের দুই আলোচিত অভিনেত্রী শবনম বুবলী ও অপু বিশ্বাসের মধ্যে পুরনো সম্পর্কের জটিলতা এবং পর্দার বাইরের শীতল যুদ্ধ যেন এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুজনেই শাকিব খান ও সন্তানদের ঘিরে একের পর এক পোস্ট দিয়ে ভক্ত-অনুরাগীদের নজর কাড়ছেন। এসব পোস্টে সরাসরি কারও নাম না থাকলেও, ইঙ্গিত ও শব্দচয়নের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে একে অপরকে উদ্দেশ্য করে ছোঁড়া খোঁচা ও কৌশলী মন্তব্য। আর শুক্রবার দুপুরে বুবলীর নতুন একটি পোস্ট যেন সেই অনির্বাচিত যুদ্ধের আরও একটি পর্ব হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্টাইলিশ ছবি পোস্ট করেন অভিনেত্রী শবনম বুবলী। ছবির সঙ্গে যুক্ত করা ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘যখন মানুষ তোমার কাজ নকল করতে শুরু করে, তখনই বুঝে নিও—তারা তোমার প্রতিভায় ঈর্ষান্বিত। তাই উপেক্ষা করো, আর নিজের সময়টা উপভোগ করো।’ এমন একটি বক্তব্যের পর নেটদুনিয়ায় আলোচনার ঝড় ওঠে। ভক্তদের বিশ্লেষণে এটিকে একরকম ‘পরোক্ষভাবে অপু বিশ্বাসকে উদ্দেশ্য করে লেখা বার্তা’ বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ এই পোস্টটি আসে এমন এক সময়ে, যখন ঠিক কয়েকদিন আগেই শাকিব খান ও সন্তানদের নিয়ে পোস্ট ঘিরে অপু-বুবলীর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ধরনের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে শবনম বুবলী তার ফেসবুকে বেশ কিছু স্থিরচিত্র পোস্ট করেন। তাতে দেখা যায়, চিত্রনায়ক শাকিব খান ও তাদের ছেলে শেহজাদ খান একান্তে সময় কাটাচ্ছেন। একটি ছবিতে শাকিব ও শেহজাদকে দেখা যায় হাসিমুখে গল্প করতে, আবার অন্য একটিতে বাবা ও ছেলের আলিঙ্গন। ছবির ক্যাপশনে বুবলী লেখেন, ‘পরিবার—যেখান থেকে জীবন শুরু হয় এবং ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না।’ এই হৃদয়স্পর্শী ক্যাপশন সঙ্গে মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করে দেওয়ায় বুবলীর পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। পোস্ট দেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আরেক অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ফেসবুকে আরও এক দফা আলোচনার জন্ম দেন। তিনি তার ছেলে আব্রাহাম খান জয় এবং তার বাবা শাকিব খানের একান্ত কিছু মুহূর্তের স্থিরচিত্র শেয়ার করেন। ক্যাপশনে অপু লিখেন, ‘বাবা এমন একটি শব্দ, যার সঙ্গে সন্তানের বন্ধন কথায় কথায় প্রমাণ দেওয়ার কিছুই নেই। তাও বাবা–ছেলের প্রতিদিনের এই খুনসুটি আর মমত্ববোধ চলতেই থাকবে আর মুহূর্তগুলো ফ্রেমে আটকে থাকবে।’ এই বক্তব্যে ‘প্রমাণ দেওয়ার কিছুই নেই’—এই অংশটিই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। অনেকে ধারণা করছেন, এটি ছিল বুবলীর ক্যাপশন এবং ছবির একটি সরাসরি প্রতিক্রিয়া।
এভাবে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ফেসবুকে প্রকাশ্য মন্তব্য এবং পাল্টাপাল্টি পোস্টের কারণে নেটিজেনদের মধ্যে দুভাগে বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদল সরাসরি বুবলীর পক্ষ নিচ্ছেন, অন্যদল অপুকে সমর্থন দিচ্ছেন। কারো কারো মতে, দুই পক্ষই নিজেদের সন্তান এবং পারিবারিক মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করে এক ধরনের সুনজর কুড়ানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, “বাচ্চাদের নিয়ে এমন সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিযোগিতা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অপ্রয়োজনীয়।” আবার কারও মন্তব্য, “দুজনই চাইছেন নিজেদের সন্তানকে শাকিব খানের জীবনে ‘মূল উত্তরাধিকারী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।”
যদিও এখন পর্যন্ত বুবলী বা অপু কেউই একে অপরের নাম সরাসরি উল্লেখ করে কিছু বলেননি, তবে তাদের পোস্টের ইঙ্গিত যে একজন আরেকজনকে উদ্দেশ্য করে তা প্রায় স্পষ্ট। বিনোদন বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকাই চলচ্চিত্রে ব্যক্তিগত জীবনের নাটকীয়তা মাঝেমধ্যেই মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। তবে বিষয়টি যখন সন্তান ও পারিবারিক আবেগের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তার প্রভাব আরও ব্যাপক হয়। একজন বিশ্লেষক বলেন, “নাম না করেই খোঁচা দেওয়ার এই সংস্কৃতি আমাদের বিনোদন অঙ্গনে নতুন নয়, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে তা আরও বেশি উগ্র হয়ে উঠেছে।”
এই দুই তারকার অনলাইন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে জটিল ও স্পর্শকাতর সম্পর্কের আবহ তৈরি হয়েছে, তা শুধু তাদের ব্যক্তি জীবনেরই নয়, বরং পুরো মিডিয়া ও ভক্ত সমাজের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বাবা-সন্তানের সম্পর্ক এবং অভিনেত্রীদের পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা—সব মিলে এ এক জটিল সামাজিক চিত্র।
নেটিজেনরা এখন তাকিয়ে আছেন—এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোথায় গিয়ে থামে। তবে আপাতত বুবলীর ‘নকল করা মানেই ঈর্ষা’ পোস্ট নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলেছে বলেই মন্তব্য করছেন ঢালিউড ঘনিষ্ঠ মহল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ