
ছবি: সংগৃহীত
টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন মেহজাবীন চৌধুরী। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ছোটপর্দায় সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছেন তিনি। নানান চরিত্রে সাবলীল অভিনয়, পরিশীলিত স্টাইল আর আধুনিক উপস্থাপনায় দর্শকদের হৃদয়ে পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন এই তারকা। নাটক, বিজ্ঞাপন, ওটিটি—সব মাধ্যমে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তি জীবনের এক বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন মেহজাবীন। প্রেমিক আদনান আল রাজীবকে বিয়ে করে সংসার জীবনের পথে হাঁটলেন এই অভিনেত্রী। আর তার ভাষ্যমতে, বিয়ের পর থেকেই তার ভাগ্য যেন নতুন করে খুলে গেছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মেহজাবীন চৌধুরী ও আদনান আল রাজীব। এই জুটি মিডিয়া অঙ্গনে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রেমে ছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত বিয়ের মধ্য দিয়ে পরিণতি পেয়েছে। তাদের সম্পর্কের শুরুটা যেমন ছিল ব্যক্তিগত, তেমনি বিয়েটাও তারা রাখেন নিতান্তই ঘরোয়া পরিসরে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তারা নিজেদের জীবনধারার কিছু মুহূর্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে শুরু করেন—যা দেখে ভক্ত-অনুরাগীরা বুঝতে পেরেছেন, তারা সত্যিই সুখী দম্পতি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মেহজাবীন। নিজের পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “বিয়ের পর মনে হচ্ছে ভাগ্যটাই বদলে গেছে। একটা স্থিরতা এসেছে জীবনে, ভেতরে ভেতরে এক ধরনের শান্তি কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ক্যারিয়ার যেভাবে চলছিল, তাতে আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু একটা সময়ের পর মনে হচ্ছিল—নিজের একজন মানুষ দরকার, যার কাছে সবকিছু ভাগ করে নেওয়া যাবে। রাজীব সেই মানুষটা আমার জীবনে এসে অনেককিছু বদলে দিয়েছে। আমরা একে অপরকে ভালোভাবে জানি, বোঝি, সম্মান করি। এই জায়গা থেকে আমি খুব আশ্বস্ত।”
ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পেশাগত জীবনেও নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে মেহজাবীনের। দীর্ঘদিন ছোটপর্দায় কাজ করার পর গত ডিসেম্বরে মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘প্রিয় মালতী’, পরিচালনায় ছিলেন শঙ্খ দাশগুপ্ত। এই সিনেমায় অভিনয়ের পর থেকেই ভক্তদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘প্রিয় মালতী’। দর্শকরা তাকে এই নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছেন।
চলচ্চিত্রের জন্য যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমনি তার পরিণত অভিনয় ও সংলাপ ডেলিভারিও প্রশংসিত হয়েছে সমালোচকদের কাছে। অনেকেই বলছেন, মেহজাবীন ছোটপর্দার গণ্ডি পেরিয়ে বড়পর্দায়ও নিজের জাত চেনাতে সক্ষম হয়েছেন।
বিয়ের পর এই নবদম্পতি একসঙ্গে ঘুরেছেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। সেখান থেকেই কিছু দারুণ মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেছেন তারা। আদনান আল রাজীব সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একগুচ্ছ ছবি পোস্ট করেন, যেখানে মেহজাবীনকে প্যারিসের রাস্তায় প্রাণবন্ত হাসিতে দেখা গেছে। ক্যাপশনে রাজীব লেখেন, “মেহজাবীন আমার হৃদয়ে রয়েছে।” তার এই পোস্টে সাড়া দিয়েছেন হাজারো অনুরাগী।
কমেন্ট সেকশনে কেউ লিখেছেন, “খুব সুন্দর হয়েছে, ভালোবাসা দেখতেও বেশ ভালো লাগে।” আরেকজন লিখেছেন, “মেহু আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে। রাজীব ভাইয়ের সঙ্গে আপনাকে খুব মানায়।”
এই ধরনের প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়—বাংলাদেশের দর্শক শুধু তাদের কাজের জন্যই নয়, ব্যক্তিজীবনের খুশিতেও তাদের পাশে থাকতে চান।
মেহজাবীন যেখানে ক্যামেরার সামনে, সেখানে আদনান আল রাজীব ক্যামেরার পেছনে। টিভিসি, নাটক, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রাজীব একজন সফল নির্মাতা ও পরিচালক। একে অপরের পেশাগত কাজকে সম্মান করেন তারা। তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, রাজীব সবসময় মেহজাবীনের সৃজনশীলতা ও স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখার জন্য উৎসাহ দেন। আবার মেহজাবীনও রাজীবের প্রজেক্টগুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে আগ্রহ দেখান। এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমর্থনই তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন মেহজাবীন। তিনি জানান, “আমি এখনও শিখছি। বিয়ে মানেই ক্যারিয়ারে ছেদ নয়। বরং বিয়ের পর আমি যেন আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছি। রাজীব আমাকে অনেক স্বাধীনতা দেয়। আমি চাই ভালো কাজ করতে, অভিনয়ের ভেতরে ভিন্নতা আনতে।”
মেহজাবীন চৌধুরীর জীবনে এখন যেন নতুন সূর্যোদয়। একটি সুন্দর সংসার, সফল ক্যারিয়ার, এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ জীবন—সব মিলিয়ে তিনি এখন জীবনের সবচেয়ে পরিপূর্ণ সময় পার করছেন। মেহজাবীন ও রাজীবের সম্পর্ক আজ শুধু একটি বিয়ের গল্প নয়; এটি দুই শিল্পী মনের মিলনের কাহিনি, যা প্রতিদিনের ছোট ছোট মুহূর্তে প্রকাশ পায়। তাদের এমনই সুখী জীবনযাপন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে—যেখানে প্রেম, সম্মান আর পারস্পরিক সমঝোতার মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে একটি পরিপূর্ণ সংসার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ