
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগের পথে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছে ইসরাইল। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে ইসরাইল এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে, এখন অপেক্ষা হামাসের আনুষ্ঠানিক জবাবের।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠিয়েছেন। এই প্রস্তাবে ইসরাইল ইতোমধ্যে তাদের সম্মতি জানিয়েছে, যদিও এটি এখনো হামাসের কাছে পাঠানো হয়নি।”
লেভিট আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে পারি, আলোচনাগুলো এখনো চলমান রয়েছে। এই প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি শুধু যুদ্ধ থামাবে না, বরং গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদেরও মুক্ত করে তাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করবে।”
এদিকে এই সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে এখনো হামাসের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। সংস্থাটির মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “আমরা নিশ্চিত নই হামাস প্রস্তাবটি গ্রহণ করবে কি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা আশাবাদী—এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ আশাবাদ, কারণ আমরা বিশ্বাস করি এই যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। “বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ চলছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি এবং সঠিক সময়ে যথাযথ পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে,” বলেন ট্যামি ব্রুস।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে সৌদি আরব ও ইসরাইলে প্রচারিত কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ৬০ দিনের জন্য কার্যকর হবে এবং এতে ধাপে ধাপে গাজা উপত্যকায় অস্ত্রবিরতি, ত্রাণ সরবরাহ, ও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয় রয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস এই ধরনের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বা বিস্তারিত পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত করেনি।
প্রেস সেক্রেটারি লেভিট বলেন, “যদি কোনো কিছু ঘোষণার মতো থাকে, তাহলে তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমি অথবা বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের পক্ষ থেকেই আসবে। মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে আমরা কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছি না।”
মার্কিন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার বিশেষ কূটনৈতিক টিম নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার ও শান্তি উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছেন। ২০২0 সালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে আরব-ইসরাইল সম্পর্কোন্নয়নের সফল পর্বের ধারাবাহিকতায় এবার গাজা যুদ্ধ থামিয়ে অঞ্চলটিতে নতুন করে কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি ইসরাইল, মিসর এবং কাতারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক দফা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকগুলোতে যুদ্ধবিরতির শর্ত, কার্যকারিতা, নজরদারি ও ত্রাণ সরবরাহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র মতে, এই পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তার খাতও বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, কাতার ও মিসর ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্যতাকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজা উপত্যকায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য যেকোনো কূটনৈতিক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই, বিশেষ করে যেখানে মানবিক দিকগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
তবে ইসরাইলের সম্মতির পরও প্রস্তাব বাস্তবায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এখনো বাকি—হামাসের আনুষ্ঠানিক সাড়া। যদি হামাস এই প্রস্তাবে সায় দেয়, তবে গাজায় চলমান রক্তপাত, দুর্ভিক্ষ ও ধ্বংসযজ্ঞ সাময়িকভাবে হলেও থামার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
গাজা উপত্যকার সংকট বহু স্তরবিশিষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে জটিল হলেও নতুন যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগ সেই সংকট নিরসনের একটি বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ইসরাইলের সম্মতি সেই সম্ভাবনাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। এখন বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে হামাসের দিকে—তারা কি মানবিক বিপর্যয়ের দিকটি বিবেচনা করে এই প্রস্তাবে সায় দেবে? নাকি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণ করবে মধ্যপ্রাচ্যের আগামীর শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং লাখো গাজার মানুষের ভাগ্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ