
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সম্প্রতি একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা দেশটির সামরিক কাঠামো ও লিঙ্গ সমতার প্রশ্নে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা নারী সেনাদের যুদ্ধ-সম্পর্কিত বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, ‘কম্ব্যাট মোবিলিটি ইউনিট’-এ নারীদের অন্তর্ভুক্তি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, যেখানে তাদের দায়িত্ব ছিল শত্রু অঞ্চলে পদাতিক বাহিনীর কাছে অস্ত্র ও সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া এবং আহত সেনাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, আইডিএফ-এর চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইয়াল জামির গত ২৯ মে, বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও ফিটনেস-সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদিও প্রশিক্ষণরত নারী সেনারা পেশাদারভাবে সক্ষম ছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ সেনাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছেন, তবে সামগ্রিকভাবে তাদের শারীরিক সক্ষমতা ও যুদ্ধ-উপযোগী ফিটনেসের স্তর সংশ্লিষ্ট ইউনিটের জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করেনি।
আইডিএফ আরও জানায়, সাম্প্রতিক মেডিকেল রিপোর্ট ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে উঠে এসেছে যে বর্তমান ধরনের প্রশিক্ষণ নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে হাড় ও পেশীর ওপর অতিরিক্ত চাপ, দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি, এবং সংযুক্ত মানসিক চাপে তারা দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ছয় মাসব্যাপী যে প্রশিক্ষণ স্কিম চলমান ছিল, তা তৎক্ষণাৎ বাতিল করা হয়েছে। তবে আগামী বছরের জন্য নতুন করে একটি পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রোগ্রাম চালু করার পরিকল্পনা করছে আইডিএফ, যেখানে নারী রিক্রুটদের জন্য প্রশিক্ষণের ধরন ও সময়সূচি নতুনভাবে নির্ধারণ করা হবে—তাদের স্বাস্থ্যগত প্রোফাইল ও সামরিক সক্ষমতা মাথায় রেখে।
তবে এ অবস্থার মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই কোর্সে ভর্তি হয়েছেন, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, ইচ্ছুক নারীরা চাইলে সামরিক বাহিনীর অন্যান্য যুদ্ধে-সম্পৃক্ত ইউনিটে স্থানান্তরের সুযোগ পাবেন, যেখানে শারীরিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম। আর কেউ যদি চাইলে, প্রশাসনিক বা অফিস-ভিত্তিক দায়িত্বেও পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
ইসরায়েলে সামরিক সেবা উভয় লিঙ্গের জন্যই বাধ্যতামূলক (বয়স, ধর্ম ও পারিবারিক কারণে কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও)। নারীরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিশেষ ইউনিটে সফলভাবে কাজ করে চলেছেন বহু বছর ধরেই। এর মধ্যে রয়েছে ওকেটজ ইউনিট—যেখানে সেনারা প্রশিক্ষিত কুকুরের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালান, ইয়াহালোম যুদ্ধ প্রকৌশলী ইউনিট, এবং ৬৬৯ উদ্ধার ইউনিট, যারা দুর্গম স্থানে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে।
এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের সামরিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে কেউ কেউ মনে করছেন এটি বাস্তবসম্মত ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত—যেটি নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জরুরি ছিল। অন্যদিকে অনেক নারী অধিকারকর্মী এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তারা একে পেছনে ফেরার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
তাদের দাবি, "শারীরিক সক্ষমতার মানদণ্ড মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে নারীদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, নারীরা সমান চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম নয়।"
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, আইডিএফ সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত সাময়িক এবং দীর্ঘমেয়াদে নারী সেনাদের অংশগ্রহণ আরও দক্ষ, নিরাপদ ও কার্যকর করতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, এবং নারীদের সামরিক ভূমিকায় অংশগ্রহণ কীভাবে প্রভাবিত হবে—তা নির্ভর করবে আগামী বছর থেকে প্রস্তাবিত নতুন পাইলট প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও সফলতার ওপর। ইসরায়েলের ভেতর ও বাইরে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা—নারী সেনাদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা, সামরিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তি এবং সমান সুযোগের প্রশ্নে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ