
ছবি: সংগৃহীত
জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। গত শুক্রবার টোকিওতে এক অনাড়ম্বর অথচ মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বজুড়ে দরিদ্র বিমোচনে মাইক্রোক্রেডিটের ধারণা প্রচলন এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের যে বৈপ্লবিক চিন্তা তিনি তুলে ধরেছেন, তা সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপই তাঁকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে।
সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া তাঁর বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে মানবিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়ের ধারণাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বিশ্বব্যবস্থাকে কেবল মুনাফাভিত্তিক কাঠামোতে পরিচালিত করা চলবে না, বরং এমন এক সমাজ গড়তে হবে যেখানে মানুষের সৃজনশীলতা, সহযোগিতা ও মানবিক মূল্যবোধ হবে উন্নয়নের চালিকাশক্তি।”
এছাড়া জাপান সফরের অংশ হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত ছয়টি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বৈঠকে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশের চলমান বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় জাপানের সহায়তা। এ বিষয়ে জাপান সরকার বাংলাদেশের জন্য ১.০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা এবং রেল খাতে উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে। জাপানের এই ঘোষণা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাপান সফরে অধ্যাপক ইউনূসের সময়সূচি ছিল ব্যস্ততাপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ। তিনি বিভিন্ন জাপানি বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যেখানে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং শিক্ষা-প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
জাপান সফর শেষে অধ্যাপক ইউনূস আগামী শনিবার (৩১ মে) সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করবেন। ওইদিন গভীর রাতে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মে অধ্যাপক ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে টোকিও পৌঁছান। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকায় তার উপস্থিতি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও উজ্জ্বল করেছে।
সার্বিকভাবে, সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, অর্থনৈতিক সমঝোতা এবং উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি – সব মিলিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফরকে একটি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ