
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে দেশের কয়েকটি নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে আগামী তিন দিনের মধ্যে অন্তত ছয়টি জেলায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে জারি করা এই সতর্কবার্তায় বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টির কারণে সেখান থেকে নেমে আসা পানির ঢল দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি সমতল বৃদ্ধি করছে।
বিশেষভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান সংলগ্ন নদীগুলো—গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীতে পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং মাতামুহুরী নদী সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে।
এর ফলে ফেনী জেলার মুহুরী নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক জলাবদ্ধতা কিংবা সীমিত মাত্রার বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার জন্য পূর্বাভাস আরও উদ্বেগজনক। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এসব জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই এবং সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানি সমতল আগামী তিন দিন পর্যন্ত ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
এর মধ্যে যাদুকাটা ও ধলাই নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে, ফলে সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকতে পারে। এছাড়া মনু ও খোয়াই নদীর পানিও সতর্কসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ফলে হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেটের বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি বাড়লেও এখন পর্যন্ত তা বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে, আগামী তিনদিনের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, এই অঞ্চলের জন্য এখনই বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের প্রতি নজর রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতেও আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্বাভাবিকের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে। এতে করে উপকূলীয় এলাকার নিচু জমি এবং চিংড়িঘেরসহ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানির প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ভোলা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজার জেলার কিছু অংশে এই উচ্চ জোয়ারের প্রভাব পড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি সমতলও বাড়তে শুরু করেছে। এই দুই নদীর পানি আগামী তিনদিন পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বিপৎসীমা ছুঁয়ে ফেলেনি, বরং কিছুটা নিচে দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
একই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীগুলোর পানি এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী একদিন এটি স্থিতিশীল থাকলেও পরবর্তী চারদিন পর্যন্ত পানি সমতল বাড়তে থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়। তবুও সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলে এখনই বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনা নেই।
গঙ্গা নদীর পানিও এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে, তবে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এই বৃদ্ধি বিপৎসীমা অতিক্রম না করে কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিভিল ডিফেন্স, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ও বাঁধ রক্ষায় সেচ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে।
আগামী তিন দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় ছয়টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং ময়মনসিংহ বিভাগের একাধিক জেলা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে সরকার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। সময় থাকতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক হয়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে, যাতে করে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ