
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম খেলায় বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হেরে গিয়েছে। ২০২ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৬৪ রানে। ফলে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান ৩৭ রানের বড় ব্যবধানে জয় নিয়েছে। এই ফল বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক হলেও সিরিজে এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ দলের কোচ এবং বিশেষত স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ। তার মতে, দলে এমন কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা নিজেদের বহুমুখী দক্ষতায় দলকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান দিতে পারছেন, যার মধ্যে অন্যতম শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং—সব ক্ষেত্রেই সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ব্যাটসম্যানরা পাকিস্তানের বোলারদের সামনে মনমরা হয়ে পড়ে, বিশেষ করে বড় স্কোর গড়তে না পারায় দল বিপর্যস্ত হয়। বোলাররাও কাঙ্খিত সফলতা পায়নি, ফলে পুরো দল ম্যাচে যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি।
তবে এই ময়দানে এক আলাদা আলো ছড়িয়েছে শামীম হোসেন পাটোয়ারী। গত বছর পর্যন্ত তার খেলা ছিল মূলত ব্যাটিং নিয়ে, যেখানে সে দেশের হয়ে নানা স্মরণীয় ইনিংস খেলে দর্শকদের মন জয় করেছিল। কিন্তু এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাত্র ৪ ওভারে ৩১ রান খরচায় ১ উইকেট তুলে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছেন শামীম। তিনি আউট করেছেন পাকিস্তানের ডানহাতি ব্যাটসম্যান খুশদিল শাহকে, যা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক উইকেট ছিল। এর আগে ফিল্ডিংয়ে শামীম বেশ কিছু দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন, যা তার সামগ্রিক কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি করেছে।
বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে শামীমের এই পারফরম্যান্সকে ‘একজন পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেটারের নমুনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “শামীম ৪ ওভার বোলিং করেছে এবং তার বোলিংয়ে আমরা খেলার মধ্যে ফিরে এসেছি। এটি ছিল তার প্রথমবার বোলিং করার সুযোগ, এবং সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। সে হতে পারে আমাদের দলে ষষ্ঠ বোলার এবং একজন ভালো বোলার।”
মুশতাক আরো যোগ করেন, “শামীম এমন একজন খেলোয়াড়, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ, অর্থাৎ সে ‘একটির মধ্যে তিন’। এই ম্যাচে সে বোলিং দেখিয়েছে, ফিল্ডিংয়ে ভাল করেছে, আর ব্যাটিং-এও সাড়া দিয়েছেন। আমরা দল গঠনে বিভিন্ন ধরনের কম্বিনেশন পরীক্ষা করছি, যেখানে শামীমের মতো বহুমুখী খেলোয়াড়দের জায়গা গুরুত্বপূর্ণ।”
দলের আরেক সিনিয়র খেলোয়াড় নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়েও মুশতাক আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “শান্ত অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। যখন প্রয়োজন হবে সে দলে সুযোগ পাবে। তাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আমাদের পরিকল্পনা তার জন্য প্রস্তুত।”
এখান থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের কোচিং স্টাফও এখনও দলে পরিবর্তন ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সামনের ম্যাচগুলোতে সফলতার আশা রাখছেন।
বর্তমানে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ অবশ্যই একটি জয়ের জন্য মাঠে নামবে, যাতে সিরিজে সমতা ফেরানো যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শামীমের মতো বহুমুখী ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের জন্য বড় শক্তি হতে পারে। এছাড়া শান্তের অভিজ্ঞতা ও তরুণ খেলোয়াড়দের উদ্যম মিলে দলকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
বিশিষ্ট ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা শামীমের খেলাকে ‘বৈপ্লবিক’ বলছেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক মুর্তজা আলী বলেন, “শামীমের এমন বোলিং দেখে বোঝা যাচ্ছে, তার মধ্যে নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। একটি টিমে এমন খেলোয়াড় থাকা খুব জরুরি, যিনি ব্যাট-বোলিং ও ফিল্ডিং—সব ক্ষেত্রেই অবদান রাখতে পারেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই ধরনের ক্রিকেটারদের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
অন্য ক্রিকেট বিশ্লেষক সুমন আহমেদ বলেন, “শামীমের বোলিং পারফরম্যান্স পুরো দলের জন্য বড় ইতিবাচক বার্তা। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, প্রতিটি ক্রিকেটারকে বহুমুখী হতে হবে। শুধু ব্যাটসম্যান বা বোলার নয়, সকলকে সবদিক থেকে প্রস্তুত হতে হবে।”
বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে অনিশ্চিত হলেও কোচিং স্টাফ ও বিশেষজ্ঞরা মিশ্র অনুভূতিতে আশাবাদী। শামীমের মতো ‘একের মধ্যে তিন’ ক্রিকেটারদের সঙ্গে নতুন কম্বিনেশন খুঁজে বের করাই এখন দলের মূল লক্ষ্য। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে সেই লক্ষ্য সফল হয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। তবে স্পষ্ট যে, শামীম হোসেন পাটোয়ারীর আবির্ভাব বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের জন্য আশার আলো হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ