
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিএনপি-সমর্থিত সাবেক মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তি করে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ছিলেন আরও ছয়জন বিচারপতি। শুনানিতে আদালত বলেন, যেহেতু এটি একটি নির্বাচনী ও প্রশাসনিক বিষয়, তাই ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের হাতে। আদালত এই মুহূর্তে ইশরাকের পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি কোনো নির্দেশনা না দিয়ে নীতিগত ও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
শুনানিতে আপিল বিভাগ সুস্পষ্টভাবে জানায়, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও দায়িত্বশীল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সিদ্ধান্ত সংবিধানসম্মত ও আইননির্ভর হওয়া আবশ্যক। আদালত পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে, “ইশরাক হোসেন যদি নির্বাচিত প্রার্থী হন এবং আইনত তার শপথ গ্রহণে কোনো বাধা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে শপথ না হওয়ার পেছনে যদি আইনগত কোনো জটিলতা থেকে থাকে, সেটাও কমিশন যাচাই করতে পারবে।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। যদিও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস জয়লাভ করেন, তবে ইশরাক অভিযোগ করেন যে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি দাবি করে আসছিলেন, প্রকৃত ভোট গণনা হলে তিনিই জয়ী হতেন এবং তার শপথ গ্রহণে কোনো আইনি বাধা নেই।
পরবর্তীকালে, শপথ গ্রহণের দাবিতে তিনি নির্বাচন কমিশন এবং আদালতের দ্বারস্থ হন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আজ আপিল বিভাগ তার আবেদন নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়।
আদালতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। শুনানি শেষে তিনি বলেন, “আমরা আদালতের পর্যবেক্ষণে সন্তুষ্ট। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, কারণ দীর্ঘদিন ধরে একটি সাংবিধানিক অধিকার থেকে ইশরাক বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বিষয়টি নিষ্ঠার সঙ্গে বিবেচনা করা।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “শপথ গ্রহণ প্রশ্নে আদালত সরাসরি কোনো আদেশ দেয়নি, বরং কমিশনের উপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আশা করি ইসি সকল দিক বিবেচনায় যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ ও আদেশ হাতে পাওয়ার পর কমিশনের সভায় বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি আইনি ও প্রশাসনিক— তাই আমাদের যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে হবে।”
বিএনপি এ সিদ্ধান্তকে ‘আদালতের ন্যায়বিচারের উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে জনগণের রায়ের প্রতি যে অবমূল্যায়ন চলছিল, এই পর্যবেক্ষণ তার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ইশরাক হোসেন একজন তরুণ, মেধাবী রাজনীতিবিদ, যিনি ঢাকা শহরের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত ছিলেন। জনগণ তাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছিল। আজকের রায়ের মাধ্যমে তার সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হলো।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ