
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন। এর ফলে সব মামলায় খালাস পাওয়া নেতার তালিকায় নাম লেখালেন তারেক রহমান। দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের আইনি লড়াই শেষে এই রায় বিএনপির রাজনীতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মোড় বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার (২৮ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি বাতিল করে দিয়ে বলেন, মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় ‘ত্রুটি ও অসঙ্গতি’ ছিল। ফলে ডা. জুবাইদা রহমানকে এই মামলায় সম্পূর্ণ খালাস দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী, আপিল না করলেও একই মামলায় তারেক রহমানও খালাস পাবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদক এই মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় অভিযোগ ছিল, তারেক রহমান তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং সেই সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান। ২০২৩ সালের আগস্টে মামলার রায় ঘোষণা করে নিম্ন আদালত। রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর ও ডা. জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার অন্যতম দিক ছিল, মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে চললেও অভিযুক্তরা দেশের বাইরে থাকায় কার্যকর শুনানি বিলম্বিত হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে ফেরেন ডা. জুবাইদা রহমান। এরপর মামলাটিতে দ্রুত অগ্রগতি ঘটে।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পক্ষ থেকে জুবাইদা রহমানের সাজার ওপর এক বছরের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। তবে এই আপিল দাখিলে ৫৮৭ দিন বিলম্ব হওয়ায় প্রথমে তা গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন হয়। আদালত এই সময় বিলম্ব মার্জনা করে আপিল গ্রহণ করেন এবং গত ১৪ মে জামিনও দেন।
অবশেষে আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে জুবাইদা রহমান সম্পূর্ণরূপে খালাস পান। তারেক রহমান মামলায় আপিল না করলেও হাইকোর্টের রায়ের আওতায় তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খালাস পাবেন।
ডা. জুবাইদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাজাহান বলেন, “এই রায়ে প্রমাণিত হলো, জিয়া পরিবারের কোনো অন্যায় ছিল না। বাংলাদেশ ছাড়া তাদের আর কোনো ঠিকানা নেই।” তিনি আরও বলেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে এই মামলাকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান স্বীকার করেছেন, মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটি ছিল, যা আদালতের নজরে এসেছে এবং সেই বিবেচনায় মামলাটি খালাস হয়েছে।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান সব মামলায় খালাস পেলেন। এর আগে একাধিক দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং ও রাজনৈতিক সহিংসতা সংশ্লিষ্ট মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে এসব মামলা হয় খারিজ হয়েছে, না হয় অভিযুক্ত পক্ষের খালাস হয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, এই রায় তারেক রহমানের জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ এবং তার দেশে ফেরার পথ প্রশস্ত করলো। তারা মনে করেন, “এটি রাজনৈতিকভাবে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধ সংশ্লিষ্ট মামলায় খালাস দেন আদালত। ফলে বিএনপি ও তার মিত্রদের রাজনীতিতে ফেরার পথ কিছুটা সহজ হলো বলে অনেকেই মনে করছেন।
এই রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এটি একটি আইনি নয়, রাজনৈতিক বিজয়। তবে সরকারপন্থী মহল থেকে এ নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
১৭ বছরের পুরনো মামলা থেকে অবশেষে মুক্তি পেলেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দীর্ঘ সময় ধরে চলা মামলাটি অবশেষে হাইকোর্টে এসে নিষ্পত্তি পেলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় শুধু একটি আইনি সিদ্ধান্ত নয়— এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ