
ছবি: সংগৃহীত
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান নৌবন্দর বরিশাল থেকে সব অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পাশাপাশি, মধ্যাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীসাধারণ, বিশেষ করে ঘরমুখো মানুষ ও শ্রমজীবী যাত্রীরা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ভোর থেকেই বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে হঠাৎ করে আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় সমুদ্র ও সংলগ্ন নদ-নদীগুলোতে সৃষ্ট হয়েছে ব্যাপক উত্তাল অবস্থা। দমকা হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত এবং নদীতে ঢেউয়ের তীব্রতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচলে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি হয়।
এ অবস্থায় বরিশাল নদী বন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সকাল থেকেই বরিশাল নদী বন্দর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
বরিশাল নৌবন্দরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা গণমাধ্যমকে জানান, “সকাল থেকে নদী কিছুটা উত্তাল, দমকা বাতাস বইছে এবং মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনায় অভ্যন্তরীণ রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।”
শুধু বরিশাল নয়, বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও। সেখানে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ একইভাবে সব লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার অন্যতম সংযোগ রুট হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শত শত যাত্রী।
এই রুটে প্রতিদিন হাজারো মানুষ লঞ্চে করে যাতায়াত করে থাকেন। যানবাহন পরিবহনের পাশাপাশি এ রুট দিয়ে পণ্য পরিবহনও হয়ে থাকে। নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে যাতায়াত করতে গিয়ে সময় ও খরচ বেড়ে গেছে যাত্রীদের।
লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরিশাল নদী বন্দর ঘিরে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন যাত্রীরা। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে কাউকে উঠতে দেওয়া হয়নি কোনো লঞ্চে। অনেকেই আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলেন, কেউ কেউ চিকিৎসা, চাকরি বা শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় ফিরছিলেন। কিন্তু হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েন।
ঘরমুখো এক যাত্রী বলেন, “আমার মা অসুস্থ, বরিশাল থেকে ঢাকায় নিয়ে যাব। কিন্তু লঞ্চ বন্ধ থাকায় এখন কী করব বুঝতে পারছি না।”
আরেক যাত্রী বলেন, “সড়কপথে গেলে অনেক সময় লাগবে, খরচও বেশি। অথচ সকালেই বের হয়েছিলাম লঞ্চ ধরতে। এখন নৌবন্দরে এসে দেখি সব বন্ধ।”
বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে ফিরলে পুনরায় লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। এর আগে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই নৌযান চলাচল শুরু করা হবে না।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এতে উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সতর্কতা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘরে বসেই আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য জানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাত্রার পরিকল্পনা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ