
ছবি: সংগৃহীত
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে এবং এটি ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিশেষ বুলেটিনে (নম্বর-৩) জানিয়েছে, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে এবং সন্ধ্যার মধ্যে এটি পুরোপুরি স্থলভাগে প্রবেশ করে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং এর আশপাশের দ্বীপ ও চরাঞ্চলগুলো ৪ ফুট বা তারও বেশি উচ্চতার বায়ু-চালিত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা, যা বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
কোথায় কতটা ঝুঁকি
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অমাবস্যা এবং গভীর নিম্নচাপ—দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ও তাদের পার্শ্ববর্তী চরাঞ্চলগুলোতে প্লাবনের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। যেসব জেলা ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ
বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা
এসব জেলার উপকূলীয় অঞ্চল এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে পটুয়াখালীর গলাচিপা, বরগুনার তালতলী, খুলনার কয়রা ও দাকোপ, এবং ভোলার মনপুরা, চরফ্যাশন এলাকায় প্লাবনের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
বাতাসের গতিবেগ ও সমুদ্র পরিস্থিতি
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে, যা মৎস্যজীবীদের জন্য মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এটি মূলত নৌযান, জাহাজ ও অন্যান্য সামুদ্রিক কার্যক্রমে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য জারি করা হয়।
মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলে ফিরে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সাগরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা ও দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ঝড়ের গতিপথ ও ভবিষ্যৎ গতিবিধি
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপটি সন্ধ্যার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের মধ্য দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। এরপর এটি প্রায় উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। তবে স্থলভাগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে এটি দুর্বল হতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও সতর্কতা
ঝড়টি যতক্ষণ পর্যন্ত স্থলভাগে না পৌঁছায় এবং দুর্বল না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকি বহাল থাকবে। স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত, বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়া এবং স্বল্পমেয়াদি প্লাবনের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে, যা নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হলেও গভীর নিম্নচাপ হিসেবে এর প্রভাব যথেষ্ট মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিপাতের কারণে।
জনগণকে আবহাওয়া দফতরের হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত অনুসরণ এবং গুজবে কান না দিয়ে দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ